আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় কোনো হস্তক্ষেপ বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করার জন্য ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সুদৃঢ় ও আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং দেশটিকে সমৃদ্ধ একটি জাতি হিসেবে গড়ে তোলায় কোনো বাধা সৃষ্টি না করাটা ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের পোস্টের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি টেলিফোনে কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। এই আলাপের সময় বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইসলামপন্থি আহমেদ আল শারা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেন এবং স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি পান। শারাকে আগে জঙ্গির তকমা দেওয়া হলেও, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে। গত নভেম্বরে শারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ঐতিহাসিক সফরে যান এবং হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। ট্রাম্প তখন শারার পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
সিরিয়ায় উত্তেজনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার দক্ষিণ সিরিয়ায়। ইসরায়েলি সেনারা রাতে এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধাকে আটক করতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। প্রতিরোধ হিসেবে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ওই এলাকায় বিমান হামলা চালায়, যা শিশুসহ কমপক্ষে ১৩ জন নিহতের ঘটনা ঘটায়। এই ঘটনার পর সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
মার্কিন একটি সূত্র জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি করবে এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে তা এ সতর্কবার্তার মাধ্যমে এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে, যা দেশটির সামরিক সক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও তারা সিরিয়ার গোলান মালভূমির আরও অংশ দখল করেছে। এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের সতর্কবার্তা ইসরায়েলকে সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে এবং সিরিয়ার স্থিতিশীলতা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য বহন করছে। তাছাড়া, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বজায় রাখতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সিরিয়ায় এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল এবং সিরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, তা সামগ্রিক অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।