অর্থনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারা, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতির কারণে ৯টি বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অবসায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮টি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায়, বর্তমানে এগুলোর শেয়ার লেনদেন চলছে। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে এই লেনদেন স্থগিত করা হতে পারে।
গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে, আগস্ট মাসে আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারা, খেলাপি ঋণের উচ্চ মাত্রা এবং মূলধন ঘাটতির ভিত্তিতে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
অবসায়নের জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এর মধ্যে আভিভা ফাইন্যান্স বাদে বাকি ৮টি প্রতিষ্ঠান দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং খুব শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে। এছাড়া, বাজারে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ৮টি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরে উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে।
আজ বাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে সার্কিট ব্রোকারের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত দরপতন হয়েছে। বেলা ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরের পরিস্থিতি ছিল— পিপলস লিজিংয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বা ৭ পয়সা কমে ৬৭ পয়সা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ১০ শতাংশ বা ৯ পয়সা কমে ৮১ পয়সা, এফএএস ফাইন্যান্সে প্রায় ৯ শতাংশ বা ১০ পয়সা কমে ১ টাকা ১০ পয়সা, ফারইস্ট ফাইন্যান্সে ১০ শতাংশ বা ৮ পয়সা কমে ৭৩ পয়সা, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সে ৯ শতাংশ বা ২০ পয়সা কমে ২ টাকা ১০ পয়সা, প্রিমিয়ার লিজিংয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বা ৮ পয়সা কমে ৭৭ পয়সা, জিএসপি ফাইন্যান্সে প্রায় ৬ শতাংশ বা ১০ পয়সা কমে ১ টাকা ৮০ পয়সা এবং প্রাইম ফাইন্যান্সে প্রায় ৭ শতাংশ বা ১০ পয়সা কমে ১ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে সাময়িক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি জোরদার করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এই অবসায়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে যে, লেনদেন স্থগিত বা বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটরিং আরও শক্তিশালী করা যায়। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলধন ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে কাজ চলছে।