আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মালয়েশিয়া আগামী ৩০ ডিসেম্বর থেকে দীর্ঘ ১১ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ বিমানের খোঁজ পুনরায় শুরু করবে। দেশটির পরিবহনমন্ত্রী বুধবার এই তথ্য জানিয়েছেন। নতুন এই অনুসন্ধান অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের রোবোটিক কোম্পানি ওশেন ইনফিনিটি অংশ নেবে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠে মোট ৫০ দিন ধরে খোঁজ অভিযান চালানো হবে।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিং যাচ্ছিল। যাত্রাপথের মাঝেই বিমানটি হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। বিমানে ১২ জন মালয়েশিয়ান ক্রুসহ মোট ২২৭ জন যাত্রী ছিলেন, যার অধিকাংশ চীনা নাগরিক। এছাড়া সাতজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাসহ ৩৮ জন মালয়েশিয়ান, এবং ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইউক্রেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া ও তাইওয়ানের নাগরিকদের উপস্থিতি ছিল।
বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বিমানটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা বিমান খাতের ইতিহাসে একটি বড় রহস্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত বছর মালয়েশিয়া জানিয়েছিল যে, যদি কোনো নতুন ও জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তারা পুনরায় অনুসন্ধান শুরু করতে প্রস্তুত। সেই প্রেক্ষিতে ওশেন ইনফিনিটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় সমুদ্রের ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার (৫,৮০০ বর্গ মাইল) এলাকায় অনুসন্ধান চালানো হবে। চুক্তি অনুযায়ী, বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেলে ওশেন ইনফিনিটিকে ৭০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করা হবে। যদি ধ্বংসাবশেষ না পাওয়া যায়, তবে কোনো অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই নতুন অনুসন্ধান অভিযানের মাধ্যমে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করতে পারলে বিমান দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে। খোঁজ অভিযানটি সমুদ্রপৃষ্ঠে সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ও রোবোটিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরিচালিত হবে, যা পূর্বের অনুসন্ধান কৌশলের তুলনায় আরও উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর।
এদিকে, এমএইচ৩৭০-এর নিখোঁজ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বিমান নিরাপত্তা নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন দেশের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এই নতুন অনুসন্ধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিমানের পরিবারদের জন্য একটি সম্ভাব্য সমাধানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
মালয়েশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী অভিযানের ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় খোঁজ চালিয়ে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা সম্ভব হলে তা বিমান দুর্ঘটনার কারণ ও ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।