খেলাধুলা ডেস্ক
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ভারতের হোয়াইটওয়াশ হওয়া বিষয়টি ভারতের ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরিজে বাংলাদেশের মাটিতে একের পর এক পরাজয়ের পর দেশটির প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এবার লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের ব্যর্থতার উদাহরণ টেনে আনেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ।
একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি সুন্দরেশ বলেন, “যখন আপনি টি-টোয়েন্টি এবং একদিনের ক্রিকেটে বেশি মন দেন, তখন টেস্ট ম্যাচে পরাজয় এড়িয়ে চলা কঠিন হয়ে যায়।” শুনানির সময় আইনজীবী মুকুল রোহতগির সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে বিচারপতির এই মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়েছে।
গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়ে ভারতীয় দলের সাদা বলের ক্রিকেটে ফলাফল উল্লেখযোগ্য। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও এশিয়া কাপের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের সাফল্য দৃঢ়। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারত অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচিত। তবে লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের ফলাফল এই সময়সীমায় বিপরীত চিত্র উপস্থাপন করেছে। গত এক বছরে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত দুটি টেস্ট সিরিজে ভারত ব্যর্থ হয়েছে। ইংল্যান্ডে সিরিজ ড্র, অস্ট্রেলিয়ায় হার এবং সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত।
বিচারপতির মন্তব্যের জবাবে রোহতগি বলেন, “ভারতীয় দলের প্রধান কোচ গম্ভীর আমার মক্কেল এবং খুব ভালো বন্ধু। আজ সকালেই আমি ওকে ফোন করেছিলাম। বললাম, গোটা দেশ বলছে যে, যদি দেশের মাটিতে ম্যাচ না জিততে পারো, তবে পদত্যাগ করা উচিত।” শুনানির পর বিচারপতি আর কোনো মন্তব্য করেননি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গম্ভীরের কোচিংয়ে সাদা ও লাল বলের ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের এ বিভাজন ক্রিকেট বোর্ড ও সমর্থকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে লাল বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে হারের ফলে টেস্ট দল এবং কোচের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে টেস্ট ক্রিকেটে দলের কাঠামো, খেলোয়াড় নির্বাচনের নীতি এবং প্রস্তুতি প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও এই বিষয়ে সচেতন। লাল বলের ক্রিকেটে ব্যর্থতার প্রভাব শুধু দলের সুনামই ক্ষুণ্ণ করছে না, ভবিষ্যতের সিরিজ ও আন্তর্জাতিক টেস্ট র্যাংকিংকেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের জন্য কার্যকর কৌশল নির্ধারণ এবং কোচিং স্ট্রাটেজি পর্যালোচনা করা এখন সময়ের দাবি।
সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় দল যদি লাল বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা এবং সাফল্য অর্জন করতে চায়, তবে কেবল সাদা বলের ফরম্যাটে মনোনিবেশ নয়, বরং টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বিশেষায়িত প্রস্তুতি, খেলোয়াড়ের মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি এবং সঠিক নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। এটি শুধু দলের জন্য নয়, বরং দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের জন্যও গুরুত্ব বহন করে।
গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়ে দেশের সাদা বলের ক্রিকেটে সাফল্য এবং লাল বলের ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জের এই দ্বন্দ্ব এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মন্তব্য দেশের ক্রিকেটের অবস্থা এবং ভবিষ্যতের টেস্ট পরিকল্পনা নিয়ে নতুন বিতর্কের পথ প্রশস্ত করেছে।