জেলা প্রতিনিধি
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্তে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৩০ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে। এই ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা এবং পূর্বে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতেন।
তেঁতুলবাড়িয়া বিওপির হাবিলদার মোহাম্মদ আলীর তথ্য অনুযায়ী, পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা তেঁতুলবাড়িয়া বিওপির সীমানারেখার ১৪০/৬ এস পিলারের আনুমানিক ১০০ গজ ভেতরে মথুরাপুর মাঠপাড়া এলাকায় বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি জানান, জীবিকার তাগিদে প্রায় পাঁচ বছর আগে এই ব্যক্তিরা ভোমরা সীমান্তের মাধ্যমে ভারতের হুগলী ও সাতরাগাছিসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতেন। পরে চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর বিএসএফের ১৪৩/হাকিমপুর চেকপোস্ট কর্তৃক তাদের আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ১০ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছেন।
পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে খুলনা জেলার কয়রা থানার মৃত আনসার সানার ছেলে আবু দাউদ সানা (৫৩), তার স্ত্রী সাজেদা খাতুন (৪৮) ও ছেলে সুমন আজাদ (২৫); তেরখাদা থানার মৃত মোলাম গাজীর ছেলে শহিদুল গাজী (৭৪) ও নাসির গাজী (২০); যশোরের কেশবপুর থানার মৃত আফতাব আলীর ছেলে শাহাদাত আলী (৬২), মেয়ে মোসাম্মৎ সুফিয়া বিবি (৪৬) ও ছেলে আসি কালে (১৭); সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার আব্দুল খালেক ছানার মেয়ে রেশমা পারভীন (৩৫) ও মরিয়ম খাতুন (১৩), নুর হোসেনের মেয়ে জান্নাতি খাতুন (৬); একই জেলার পাটকেল ঘাটা থানার দবির উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে তহিদুর বিশ্বাস (৩৬), সদর থানার ভারশা গ্রামের মোকতাদুল হক মোড়লের ছেলে রাহান মোড়ল (২৮); বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানার নুরুল ইসলামের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৪০), শাহ আলম আকনের ছেলে মিজান আকন (৪০), আব্বাস আকনের মেয়ে রহিমা বেগম (২৬) ও ছেলে হাসান, ইসমাইল হাওলাদারের মেয়ে ছায়রা বেগম (৩৫), কোবির আকনের ছেলে হাসিব (১৪); খুলনা সদর থানার শহর আলীর ছেলে শরিফুল সানা (২২), কয়রা থানার মোহসিন আলমের ছেলে মইনুর রহমান (১৮), নজরুল ইসলাম গাজীর ছেলে শাকিল আহমেদ (২৩); যশোরের কেশবপুর থানার অলিয়ার রহমানের মেয়ে শিউলি বেগম (৩০) ও মেয়ে আফরিন সুলতানা (১২), শহিদুল সরদারের শিশু কন্যা মারিয়া সুলতানা (১); অভইনগর থানার মসিয়ার রহমান ছেলে আবির (২৫), কোটা পাইড়া থানার নেছার মোড়লের মেয়ে সকিনা বিবি (৩৬), কয়রা থানার মামুন গাজীর ছেলে শামীম গাজী (১৫) ও সালাউদ্দিন গাজী (৮); ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার হাবেজ আলীর মেয়ে রুজিনা আফরিন (২৪)।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বনি ইসরাইল জানান, আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি আরও জানান, সীমান্তে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালানো হচ্ছে যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পুশইন বা অনুপ্রবেশের ঘটনা রোধ করা যায়।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সীমান্ত নিরাপত্তা ও জনসুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া সীমান্ত পারাপারে নিয়মিত নজরদারি এবং যৌক্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।
পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা মূলত জীবিকার তাগিদে সীমান্ত পার হয়ে ভারতীয় এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সরকারি সূত্র জানায়, এ ধরনের সীমান্ত পারাপার প্রায়শই সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে ঘটে থাকে। বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষা করতে কাজ করছে।
মহামারী ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষদের প্রায়ই জীবিকা নির্বাহের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখা যায়। স্থানীয় প্রশাসন এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রত্যেককে আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে মানবিক ও আইনগত সমাধান নিশ্চিত করছে।