আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আরব সাগরের তীরবর্তী ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় পর্যটনরাজ্য গোয়ার উত্তরাঞ্চলীয় জেলা আরপোরার বাগা বিচ এলাকার একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পর্যটক ও ক্লাবের কর্মচারীসহ অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত ১২টার পর এ দুর্ঘটনা ঘটে। রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাস্থল সূত্রে জানা যায়, বাগা বিচ এলাকায় অবস্থিত ‘বার্চ বাই রোমিও লেন’ নামের নাইটক্লাবটিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলাকালে হঠাৎ করে রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। রান্নাঘরে থাকা একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে আগুন মুহূর্তের মধ্যেই রান্নাঘর ও সংলগ্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ক্লাবের ভেতরে ও আশপাশে তখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মচারী ও দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই বের হয়ে আসতে পারেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অধিকাংশ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে রান্নাঘর ও তার আশপাশের এলাকা থেকে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, নিহতদের বড় অংশই ছিলেন ক্লাবটির কর্মচারী, যারা রান্নাঘর ও সার্ভিস এলাকাতে কাজ করছিলেন। পাশাপাশি কয়েকজন পর্যটকের মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের সংখ্যা আনুমানিক তিন থেকে চার জন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতভর কাজ করে রোববার ভোরের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক আলোক কুমার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগুন মূলত রান্নাঘর এবং ভবনের প্রথম তলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর অবস্থান থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, অধিকাংশ নিহত ব্যক্তি ক্লাবের অভ্যন্তরীণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পর্যটকদের পরিচয় শনাক্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। রোববার সকাল পর্যন্ত উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত শোক প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, এটি গোয়ার জন্য একটি অত্যন্ত দুঃখজনক দিন। তিনি জানান, ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সরকারিভাবে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পেছনে কারও অবহেলা বা গাফিলতি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, রান্নাঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি এবং গ্যাস ব্যবস্থাপনায় অবহেলা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তবে চূড়ান্তভাবে কারণ নির্ধারণের জন্য ফরেনসিক ও অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আলাদা তদন্ত চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজ্যের অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র এবং নাইটক্লাবের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে।
এই ঘটনায় গোয়া রাজ্যজুড়ে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। পর্যটননির্ভর এই রাজ্যে এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিরোধে কঠোর নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।