খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান আইএল টি–টোয়েন্টি লিগে শারজাহ ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলতে যোগ দিলেও এখনও মাঠে নামেননি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সর্বশেষ সিরিজে অংশ না নিয়ে তিনি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত টি–১০ লিগে খেলেছিলেন নর্দান ওয়ারিয়র্সের হয়ে। ওই প্রতিযোগিতায় বল হাতে কার্যকর পারফরম্যান্সের পর তাকে সরাসরি আইএল টি–টোয়েন্টিতে শারজাহ ওয়ারিয়র্স দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নতুন দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করলেও এখন পর্যন্ত একাদশে জায়গা হয়নি তার।
চলমান আসরে শারজাহ ওয়ারিয়র্স মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে দলটি আবুধাবি নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ৩৯ রানে পরাজিত হয়। সেই ম্যাচে স্কোয়াডে থাকলেও তাসকিনকে একাদশে রাখা হয়নি। আজ রোববার বিকেল ৪টায় শারজাহ ও এমআই এমিরেটসের মধ্যকার পরবর্তী ম্যাচ সামনে রেখে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। দলের ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, তাসকিনকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়ার পরই তাকে দলে বিবেচনা করা হবে।
আইএল টি–টোয়েন্টি লিগটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তারকা ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে গঠিত হওয়ায় প্রতিযোগিতা তীব্র। তাসকিন এই পরিবেশে খেলতে পারলে তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে সামনের বিপিএল আসর ও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে ম্যাচ খেলা এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকা বাংলাদেশের পেস আক্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় দলের সূচি অনুযায়ী পেসারদের ওপর বাড়তি চাপ থাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে অংশ নেওয়া ক্রিকেটারদের ফিটনেস বজায় রাখা নিয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
শারজাহ ওয়ারিয়র্সের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় তাসকিন জানান, তিনি নতুন দলে যোগ দিয়ে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আসন্ন ম্যাচগুলোতে ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিতে চান। তিনি বলেন, নিজের সেরাটা দিয়ে লিগটি শেষ করতে পারলে দেশের জার্সিতে আসন্ন দায়িত্বগুলো আরও ভালোভাবে পালন করা সম্ভব হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, টুর্নামেন্ট চলাকালে সুস্থ থাকা তার প্রধান লক্ষ্য, যাতে বিপিএলে অংশগ্রহণসহ জাতীয় দলের পরবর্তী দায়িত্বে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি তাসকিনের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত থাকতে হলে নিজের ফিটনেস, গতি এবং দক্ষতা প্রতিনিয়ত উন্নত করতে হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবেশে অনুশীলন এবং উচ্চমানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার সুযোগ তাকে এই উন্নতির ক্ষেত্রগুলোতে সহায়তা করবে। লিগের পিচ ও আবহাওয়া পেসারদের জন্য ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকে, যা তিনি কাজে লাগাতে চান।
শারজাহ ওয়ারিয়র্সের প্রথম ম্যাচে দলের বোলিং ইউনিট প্রত্যাশামতো ছাপ রাখতে পারেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোচিং স্টাফ বোলিং আক্রমণে পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। তাসকিনের বৈচিত্র্যময় বোলিং এবং পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভারে কার্যকারিতা দলের জন্য একটি মূল্যবান সংযোজন হতে পারে। বিশেষ করে গতি ও বাউন্স ব্যবহার করার দক্ষতা তাকে প্রতিপক্ষের জন্য বাড়তি হুমকি হিসেবে দাঁড় করাতে পারে।
এদিকে, বাংলাদেশ দলের আসন্ন ব্যস্ত সূচির কথা বিবেচনা করলে তাসকিনের প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। বিপিএলে অংশগ্রহণের আগে আইএল টি–টোয়েন্টিতে খেলার সুযোগ পেলে তিনি ম্যাচ ফিটনেস ধরে রাখতে পারবেন। তাছাড়া টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা তাকে আরও পরিণত করবে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে তাসকিন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের অন্যতম ভরসা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।
এখন তাসকিনের লক্ষ্য শারজাহ ওয়ারিয়র্সের হয়ে মাঠে নেমে নিজের সামর্থ্য তুলে ধরা। দলে তার ভূমিকা নির্ভর করবে ম্যাচ পরিকল্পনা, প্রতিপক্ষের ধরন ও কন্ডিশনের ওপর। ম্যাচের পূর্বদিন দলীয় অনুশীলনে তিনি পেস ও লেন্থ নিয়ন্ত্রণের ওপর অতিরিক্ত মনোযোগ দেন। বোলিং কোচের সঙ্গে তিনি ডেথ ওভারের পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছেন, কারণ আধুনিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ ওভারের বোলিংই অনেক সময় ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়।
তাসকিনের আইএল টি–টোয়েন্টি অভিষেক কখন হচ্ছে, তা নির্ভর করছে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ও ম্যাচ পরিস্থিতির ওপর। তবে দলের প্রথম পরাজয়ের পর পরবর্তী ম্যাচে পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকায় তাসকিনকে একাদশে দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার অন্তর্ভুক্তি দলকে নতুন গতি এনে দিতে পারে এবং দলের সামগ্রিক বোলিং শক্তি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।