বিনোদন ডেস্ক
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে ঢাকার একটি আদালত। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা তা দাখিল করতে না পারায় আদালত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, এ মামলার পরবর্তী প্রতিবেদন দাখিলের দিন কয়েক দফা পিছিয়ে গেছে। তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবেদন প্রস্তুতিতে সময় লাগার কথা উল্লেখ করা হলেও আদালত দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। নতুন তারিখ নির্ধারণের ফলে মামলার পরবর্তী আইনি কার্যক্রম ওই দিনেই পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ২১ অক্টোবর রমনা থানায় সালমান শাহের মামা মোহাম্মদ আলমগীর হত্যার অভিযোগে মামলাটি করেন। মামলায় সালমান শাহের স্ত্রী সামীরা হক, শিল্পপতি ও সাবেক প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির নামও মামলায় উল্লেখ করা হয়। বাদীপক্ষের অভিযোগ, ঘটনার পেছনে পরিকল্পিতভাবে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন, যারা পরস্পরের সহায়তায় অপরাধটি সংগঠিত করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটনে নিজ বাসা থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় সালমান শাহকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে অপমৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করা হলেও পরিবারের সদস্যরা প্রথম থেকেই মৃত্যুর ঘটনাকে ‘হত্যা’ বলে দাবি করে আসছেন। পরিবারের অভিযোগ, তার জনপ্রিয়তা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে অবস্থান—বিভিন্ন কারণ মিলিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে, একই বছরের ২৪ জুলাই সালমান শাহের বাবা কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী আদালতে অপমৃত্যুর মামলা পুনঃতদন্তের আবেদন করেন। তিনি মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করারও আবেদন জানান। পরে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বাদীপক্ষের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনার পর মামলার তদন্তের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওপর ন্যস্ত করা হয় এবং তদন্ত কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে এবং এতে একাধিক ব্যক্তি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ না পাওয়ায় মামলার রহস্য উন্মোচনে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রায় তিন দশক আগের এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য, নথিপত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ করা জটিল হওয়ায় তদন্ত সম্পন্ন হতে সময় লাগছে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি দেশে নেই বা কেউ কেউ আর জীবিতও নেই, যা তদন্তের গতি শ্লথ করার একটি কারণ হতে পারে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার কোনো আসামি মারা গেলে অভিযোগের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষে বিবেচিত হবে এবং তারা আইনি দায় থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। এ ধরনের পুরোনো মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান নিশ্চিত করাসহ নানা কারণে তদন্ত জটিল হয়ে পড়ে।
সালমান শাহের মৃত্যু দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তার মৃত্যু নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় থাকায় মামলার অগ্রগতি সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের কেন্দ্র। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ নির্ধারণের ফলে মামলার পরবর্তী ধাপ কীভাবে এগোবে, তা ওই দিন আদালতের কার্যক্রমেই স্পষ্ট হবে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।
তবে এখন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত সংস্থার দায়িত্ব হলো প্রতিবেদন দাখিল করা এবং ঘটনার কারণ ও পটভূমি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল নিয়ে আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত মামলার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।