আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক কাঠামো এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে এক গোপন বৈঠক করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কিত একাধিক সূত্রের বরাত জানা গেলেও বৈঠকের সময়, স্থান এবং আলোচনার প্রকৃতি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল যুদ্ধোত্তর গাজা অঞ্চলে প্রশাসনিক শূন্যতা পূরণে একটি বিকল্প কাঠামো তৈরির সম্ভাবনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, টনি ব্লেয়ার গাজার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আংশিকভাবে যুক্ত করার একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় শাসনব্যবস্থাকে এমনভাবে পুনর্গঠন করা, যাতে নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সহজ হয়।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা চালুর চিন্তা রয়েছে। এতে গাজার কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল নির্বাচন করে সেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। সূত্রের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই পরীক্ষামূলক পর্যায়ের মাধ্যমে দেখা হবে ফিলিস্তিনি প্রশাসন কতটা কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিতে তারা কতটা সক্ষম। পরীক্ষামূলক ধাপ সফল হলে পরবর্তী সময়ে এই কাঠামো বিস্তৃত করে গাজার বৃহত্তর অঞ্চলে তা স্থায়ী করা হতে পারে।
তবে এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি নির্ভর করছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিভক্তি, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং অধিকারে সীমাবদ্ধতা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর আন্তর্জাতিক আস্থাকে দুর্বল করেছে। তাই ব্লেয়ারের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত পুনর্গঠন ও জবাবদিহি বৃদ্ধিকে প্রাথমিক শর্ত হিসেবে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও এই সংস্কার প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কার্যকর প্রশাসনিক সক্ষমতা ছাড়া গাজার যেকোনো ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো গত কয়েক দিন ধরে এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। তাদের মূল বিবেচনায় রয়েছে গাজায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সম্ভাব্য হুমকি এবং প্রশাসনিক পরিবর্তন ইসরায়েলের সামগ্রিক নিরাপত্তার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। গাজার প্রশাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে যুক্ত করা হলে সেখানে কীভাবে নিরাপত্তা সমন্বয় চলবে, ইসরায়েলি বাহিনীর ভূমিকা কী হবে এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কীভাবে পরিচালিত হবে—এসব বিষয়ও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে ধারণা করা হয়।
এ বিষয়ে টনি ব্লেয়ার একাধিক আরব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই দেশগুলোর সহায়তা না পেলে গাজায় যেকোনো নতুন প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ মানবিক সহায়তা, পুনর্গঠন ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
গাজায় সম্ভাব্য প্রশাসনিক পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতিতে গাজার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, কে সেখানে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেবে, এবং কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে—এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতি ঘোষণা করা হয়নি। ফলে ব্লেয়ার–নেতানিয়াহু বৈঠকটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আগ্রহ তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় নতুন প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার যেকোনো উদ্যোগই বহুপাক্ষিক সমর্থন ছাড়া সফল হওয়া কঠিন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে যুক্ত করা হলে তা গাজার রাজনৈতিক অবস্থাকে আংশিকভাবে স্থিতিশীল করতে পারে, তবে এর জন্য প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহায়তা, আর্থিক সংস্থান এবং স্থানীয় জনগণের আস্থা। একই সঙ্গে নিরাপত্তা সমন্বয় ও সীমানা নিয়ন্ত্রণ—উভয় ক্ষেত্রেই বৃহত্তর পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে।
পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত হলেও ব্লেয়ারের এই উদ্যোগকে গাজা প্রশ্নে সম্ভাব্য নতুন কূটনৈতিক পথচলার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আলোচনার অগ্রগতি এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে, তা নির্ধারণ করবে।