খেলাধুলা ডেস্ক
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লা লিগার ম্যাচে সেল্টা ভিগোর কাছে ২–০ গোলে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ কঠিন এক রাতে পড়েছে। চোট ও দুই লাল কার্ডের কারণে ম্যাচের বেশির ভাগ সময়ই সংখ্যাগত ঘাটতিতে খেলতে হয় তাদের। আগামী বুধবার ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বের ম্যাচের আগে এমন হার দলটির প্রস্তুতি ও মনোবলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রথমার্ধেই রিয়ালের ডিফেন্সে বড় ধাক্কা আসে, যখন সেন্টার ব্যাক এডার মিলিতাও ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। ম্যাচের গতিপ্রকৃতি এতে বদলে যায় এবং ডিফেন্সভাগ পুনর্গঠনে দলটি চাপে পড়ে। পরে দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালের দুই ডিফেন্ডার ফ্রান গার্সিয়া ও আলভারো কারেরাস লাল কার্ড দেখলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। সংখ্যাগত ঘাটতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেল্টা আক্রমণাত্মক খেলায় মনোযোগ দেয় এবং উইলিয়ট সুডেবার্গের দুই গোলেই তারা গুরুত্বপূর্ণ জয় নিশ্চিত করে।
এই জয়ের ফলে লিগ টেবিলে রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থান আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান চার পর্যন্ত বেড়েছে। মৌসুমের শেষ ভাগে এসে পয়েন্ট হারানোর ধারা রিয়ালের শিরোপা সংগ্রামের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। শেষ পাঁচ ম্যাচে কেবল একটি জয় পাওয়ায় দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জাবি আলোনসো খেলোয়াড়দের মনোবল ধরে রাখার ওপর জোর দেন এবং পরবর্তী ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, দলের প্রতিকূল পরিস্থিতি উপলব্ধি করলেও সামনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। মিলিতাওয়ের চোট সম্পর্কে তিনি বলেন, ইনজুরি ডিফেন্সভাগে বড় প্রভাব ফেলেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা মোকাবিলা করা দলের জন্য কঠিন ছিল।
রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন আলোনসো। দ্বিতীয়ার্ধে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ফ্রান গার্সিয়ার দুই হলুদ কার্ড এবং ম্যাচের শেষদিকে কারেরাসের লাল কার্ড নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। আলোনসোর মতে, কয়েকটি সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল এবং ম্যাচের গতি ও রিয়ালের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। রেফারিং নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির ঘটনা এ মৌসুমে লা লিগায় নতুন নয়, এবং এ ম্যাচ শেষে বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।
দলের সামগ্রিক ব্যর্থতার বিষয়ে আলোনসো দায়িত্ব ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, দলের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ সকলেরই উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং ব্যর্থতার দায় সবাইকে নিতে হবে। লিগের প্রতিযোগিতা এখনো বাকি থাকায় তিনি পরবর্তী ম্যাচগুলোতে দলকে আরও সংগঠিত ও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
আগামী বুধবার ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচকে সামনে রেখে রিয়ালের প্রস্তুতি এখন মূল ফোকাস। বার্নাব্যুতে সেল্টার বিপক্ষে হার শুধু পয়েন্টই নয়, আত্মবিশ্বাসেও আঘাত হেনেছে। চোট ও নিষেধাজ্ঞার কারণে দলের স্কোয়াডে পরিবর্তন আনা হতে পারে এবং ম্যাচ পরিকল্পনাতেও বদল আসতে পারে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পারফরম্যান্স দেখাতে হলে রিয়ালকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
লা লিগার চলমান মৌসুমে প্রতিযোগিতা তীব্র। প্রতিটি ম্যাচে পয়েন্ট হারানো শিরোপার লড়াইকে জটিল করে তুলতে পারে। সেল্টার বিপক্ষে রিয়ালের পরাজয় সেই জটিলতা আরও বাড়িয়েছে। তবে সামনে থাকা চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ এবং লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে রিয়ালের পারফরম্যান্সই নির্ধারণ করবে দলটি মৌসুমের শেষভাগে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পারে।