জেলা প্রতিনিধি
দেশের মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য অংশ রাজবাড়ী জেলায় হলেও স্থানীয় বাজারে এর মূল্য স্থিতিশীল হয়নি। সোমবার সকালে জেলার প্রধান বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। উৎপাদন অঞ্চলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজার থেকেই দামের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ভালো মানের পুরাতন পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও ছোট আকারের পুরাতন পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলেও এর দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। নিম্নমানের পেঁয়াজ সাইজ ও মানভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে এসব পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারের তুলনায় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কম।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর এ সময়ে উৎপাদন অঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসে। কিন্তু চলতি মৌসুমে এখনো প্রত্যাশিত পরিমাণ সরবরাহ হয়নি। ফলে পাইকারি পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না, যা খুচরা দামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। তাদের মতে, সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাজারও স্থিতিশীল হবে না।
ভোক্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই পেঁয়াজের দাম বাড়তি অবস্থায় রয়েছে। বাজারে সরবরাহ থাকলেও ক্রেতাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দাম কমছে না, যা তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলছে। তারা মনে করেন, প্রশাসনের নিয়মিত বাজার মনিটরিং জোরদার হলে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলায় চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে। তবে চূড়ান্তভাবে ৫ হাজার ২৫০ হেক্টরে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এতে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে বাজারে অধিক পরিমাণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। এতে সরবরাহ বাড়বে এবং বাজারে দামের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আরও জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করলে মূল্যস্ফীতি কমতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হলে স্থানীয় বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে। তবে তারা মনে করেন, কৃষকেরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয়, সেদিকে নজরদারি জোরদার করা জরুরি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী কার্যালয় জানায়, বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে শুরু করেছে, যদিও এখনো পরিমাণ সীমিত। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন। সংস্থাটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও তারা জানান।
রাজবাড়ী জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলেও স্থানীয় বাজারে দামের ক্রমবর্ধমান ধারা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর নতুনভাবে প্রশ্ন তুলেছে। কৃষি বিভাগ, প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কার্যকর হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং আমদানি বাড়লে বাজারে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।