রাজনীতি ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশের বিভিন্ন নির্বাচনি আসনে মোট ১২৫ জন প্রার্থীর প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেছে। বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এই তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। তিনি জানান, মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন বলেন, দলীয় বিধান অনুসারে মনোনয়নপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার আগে প্রতিটি নামের বিষয়ে দলীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নৈতিক মানদণ্ড, সাংগঠনিক সক্রিয়তা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্বাচনি এলাকার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, দেশব্যাপী সংগঠন বিস্তারের অংশ হিসেবে এনসিপি এবার তুলনামূলক বিস্তৃত পরিসরে প্রার্থী নির্বাচন করেছে, যাতে দলটি জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে।
প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গ, মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দলটি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তালিকায় নতুন মুখের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিত সংগঠকও রয়েছেন। এতে বোঝা যায়, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন অঞ্চলে উপস্থিতি জোরদারের কৌশল গ্রহণ করেছে।
পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে একাধিক আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এসব আসনের মধ্যে পঞ্চগড়-১-এ মো. সারজিস আলম, ঠাকুরগাঁও-২-এ মো. রবিউল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩-এ মো. গোলাম মর্তুজা সেলিম, দিনাজপুর-৩-এ আ হ ম শামসুল মুকতাদির এবং দিনাজপুর-৫-এ ডা. মো. আব্দুল আহাদ মনোনয়ন পেয়েছেন। নীলফামারী-২-এ ডা. মো. কামরুল ইসলাম দর্পন, নীলফামারী-৩-এ মো. আবু সায়েদ লিয়ন, লালমনিরহাট-২-এ রাসেল আহমেদ এবং লালমনিরহাট-৩-এ মো. রকিবুল হাসান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
রংপুর অঞ্চলের প্রার্থীদের মধ্যে রংপুর-১-এ মো. আল মামুন, রংপুর-৪-এ আখতার হোসেন, কুড়িগ্রাম-১-এ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম-২-এ ড. আতিক মুজাহিদ, কুড়িগ্রাম-৩-এ ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু সাঈদ জনি, গাইবান্ধা-৩-এ মো. নাজমুল হাসান সোহাগ এবং গাইবান্ধা-৫-এ ডা. আ. খ. ম. আসাদুজ্জামানকে ঘোষণা করা হয়েছে। জয়পুরহাট-১-এ গোলাম কিবরিয়া, জয়পুরহাট-২-এ আবদুল ওয়াহাব দেওয়ান কাজল, বগুড়া-৬-এ আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২-এ মু. নাজমুল হুদা খান (রুবেল খান) এনসিপির হয়ে লড়বেন।
রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। নওগাঁ-১-এ কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস, নওগাঁ-২-এ মো. মাহফুজার রহমান চৌধুরী, নওগাঁ-৩-এ পরিমল চন্দ্র (উরাও), নওগাঁ-৪-এ মো. আব্দুল হামিদ এবং নওগাঁ-৫-এ মনিরা শারমিন মনোনয়ন পেয়েছেন। নাটোর-২-এ আব্দুল মান্নাফ, নাটোর-৩-এ অধ্যাপক এস. এম. জার্জিস কাদির, সিরাজগঞ্জ-৩-এ দিলশানা পারুল, সিরাজগঞ্জ-৪-এ দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী (প্রীতি), সিরাজগঞ্জ-৫-এ মনজুর কাদের ও সিরাজগঞ্জ-৬-এ এস এম সাইফ মোস্তাফিজকে ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া পাবনা-৪ আসনে অধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুল মজিদ, মেহেরপুর-১-এ মো. সোহেল রানা, মেহেরপুর-২-এ অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ, চুয়াডাঙ্গা-১-এ মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, ঝিনাইদহ-১-এ অ্যাডভোকেট লাবাবুল বাসার (দয়াল বাসার), যশোর-৪-এ মো. শাহজাহান কবীর, মাগুড়া-২-এ মোহাম্মাদ তরিকুল ইসলাম, বাগেরহাট-২-এ মোল্যা রহমাতুল্লাহ, খুলনা-১-এ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, খুলনা-২-এ ফরিদুল হক, পটুয়াখালী-১-এ অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা এবং পটুয়াখালী-২-এ মুজাহিদুল ইসলাম শাহিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনকে তৃণমূলে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি, প্রার্থীদের স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণা প্রস্তুতি এবং নির্বাচনি পরিবেশের ওপর নিবিড় নজর রাখার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এনসিপির এই প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে দলটির সামগ্রিক নির্বাচন প্রস্তুতির অগ্রগতি আরও সুস্পষ্ট হলো।