রাজনীতি ডেস্ক
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও মিথ্যা মামলার অভিযোগ তুলে অতীত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অন্ধকার সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার তাঁর ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি দাবি করেন, গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন ছিল নিয়মিত ঘটনা এবং এই পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পোস্টে তারেক রহমান উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সময় ধরে দেশে ভয় ও দমন-পীড়নের একটি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার ফলে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বহু মানুষ হয়রানি, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মুখোমুখি হন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশেষ করে রাতের বেলা হানা, মিথ্যা মামলা এবং নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার শিকার হওয়া ছিল বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মীর দৈনন্দিন বাস্তবতা। তিনি দাবি করেন, এই সময়কালে বিএনপির নেতাকর্মীরাই বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু ও মামলা হয়রানির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হন। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি বিরোধী দলের ঘরেই হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান আরও বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াও ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক এই পরিবেশের প্রতিকূলতা অনুভব করেছেন। তাঁর মতে, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তার অধিকারসহ মৌলিক নাগরিক স্বাধীনতা ছিল চরমভাবে সংকুচিত। তিনি দাবি করেন, ২০১৫ সাল থেকে তাঁর কোনো বক্তব্য সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার না করার মতো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, যা তাঁর মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভূমিকা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রতিকূলতার সময় তিনি ধৈর্য ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিথ্যা মামলা, কারাবাস ও রাজনৈতিকভাবে অচল করে দেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যেও তিনি গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে যাননি— এমন দাবিও পোস্টে উঠে আসে। তারেক রহমান জানান, এই সময় তাঁর নিজের পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু অন্যান্য পরিবারের মতো তারা ব্যক্তিগত ক্ষতির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গুম-নিখোঁজের ঘটনার উদাহরণ তুলে তিনি বলেন, অতীতের এসব ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ন্যায়-নৈতিকতা, জবাবদিহি ও ক্ষমাশীল মানসিকতা জরুরি। তাঁর মতে, কষ্ট মানুষকে তিক্ত না করে মূল্যবোধে দৃঢ় করে তুলতে পারে, এবং এই অভিজ্ঞতা থেকেই ভবিষ্যতের রাজনীতিতে সংহতি ও সহনশীলতার ভিত্তি গড়ে ওঠা প্রয়োজন।
পোস্টে তিনি রাজনৈতিক সমাধানের পথকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান। তাঁর দাবি, বিএনপি এখন এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যেখানে নাগরিকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে এবং কেউ রাষ্ট্রের ভয় নিয়ে জীবনযাপন করবে না। তিনি বলেন, ভিন্নমতকে গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াই একটি কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থার পূর্বশর্ত।
১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ দিনটি দেশকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে মানবাধিকার মানুষের মৌলিক অস্তিত্বের ভিত্তি। তিনি অতীতের আলোচিত গুম, হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব ঘটনার স্মৃতি ভবিষ্যতে দায়মুক্তি ও নিপীড়নের পুনরাবৃত্তি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শেষাংশে তিনি জানান, বিএনপি অতীতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হলেও ভেঙে না পড়ে বরং ন্যায়বিচার, পুনর্মিলন ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে আরও দৃঢ় হয়েছে। তাঁর বক্তব্যে তিনি এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, জীবন ও অধিকার সমানভাবে মূল্যবান এবং মানবাধিকার হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি।