রাজনীতি ডেস্ক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দলকে দায়িত্ব পালন করতে এবং দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে যুবদল ও কৃষক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির লক্ষ্য হলো কোনো মেগা প্রকল্পে যুক্ত না হওয়া, কারণ মেগা প্রকল্প মানে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতি। রাষ্ট্রীয় অর্থের যথাযথ ব্যবহার শিক্ষার, স্বাস্থ্যের এবং মানবাধিকার উন্নয়নের জন্য করতে হবে। তিনি অতীতের উদাহরণ তুলে বলেন, স্বৈরাচারী শাসনামলে তৈরি করা আইটি পার্ক ও অন্যান্য অবকাঠামোর আসল উদ্দেশ্য সফল হয়নি এবং সেখানে সমাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। এজন্য বিএনপি নতুন কোনো আইটি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে না, বরং বিদ্যমানগুলো সংস্কার করে প্রযুক্তি খাতের জন্য ব্যবহারযোগ্য করার উদ্যোগ নেবে।
সভায় তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ মোট আটটি খাতের জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। এই কর্মশালা শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন অংশগ্রহণ করবে। চূড়ান্ত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে। কর্মশালার চতুর্থ দিনে যুবদল ও কৃষক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, জনগণ এখনো জানতে চায়, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারা কী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে প্রণীত পরিকল্পনা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে। তার মতে, পরিকল্পনার মাত্র ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন হলেও তা দেশের মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার বক্তব্যে বলা হয়, “ধানের শীষকে জেতানো ছাড়া জনগণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় এবং দেশকে রক্ষা করার পথও নেই।” তিনি নেতা-কর্মীদের বলেন, “এখনই মাঠে নেমে জনগণের কাছে যেতে হবে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, বিএনপি দেশের বৃহত্তর সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে এসেছে।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের সময় রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছিল। বিএনপি সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হলেও দল প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সমাধানের পথ অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে ভিন্নমতাদর্শের মানুষ যেন নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।”
সভার আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এতে বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগরী উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দল সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
তারেক রহমান বলেন, ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ নানা ধরনের শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়েছে। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং হেফাজতে মৃত্যু সহ নানা ধরনের ভয়, মানুষের জীবন ও মত প্রকাশের মৌলিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে। তিনি বলেন, বিএনপির সহিংসতা, রাজনৈতিক নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকাররা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ধৈর্য ও প্রতিরোধের প্রশংসা করে বলেন, তার গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনো সরে যাওয়া হয়নি এবং তাঁর বিশ্বাস ছিল অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না। তারেক রহমান আরও বলেন, মানবাধিকারই মানুষের জীবনের মৌলিক শর্ত, এবং বিএনপি এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায় যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার, মত প্রকাশ ও জীবন মূল্যবান হবে।