রাজনীতি ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্নমতের প্রতি আক্রমণ, নারীদের সম্মানহানি এবং প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার করে ব্যক্তি-মানহানি বাড়ছে—এ প্রবণতাকে গভীর উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল তার ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই দিনে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো আরেকটি বিবৃতিতে তিনি মানবাধিকারের প্রতি সম্মিলিতভাবে শ্রদ্ধা ও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান সামাজিক মাধ্যম–সংক্রান্ত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ব্যক্তির ভিন্ন মতামত বা মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে অপমানজনক মন্তব্য, সংগঠিত আক্রমণ এবং ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে কাউকে হেনস্তা করাকে একটি অশুভ প্রবণতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এসব কার্যক্রম কেবল ব্যক্তি মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে না, বরং সামগ্রিক সামাজিক পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছে। বিশেষ করে নারীদের লক্ষ্য করে অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান বা তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্যকে বিকৃত করে প্রচারের ঘটনাগুলো সমাজে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও জানান, প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে ভুয়া ছবি, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কনটেন্ট এবং তথ্যবিকৃতি ছড়িয়ে মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করার ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের অপব্যবহার সামাজিক আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি ব্যক্তি ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্যও ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। তার মন্তব্য অনুযায়ী, এসব আচরণ নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং রাষ্ট্রীয় আইন কাঠামোর জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ডা. শফিকুর রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে কখনো শত্রুতার রূপ দেওয়া উচিত নয়। তার মতে, মতভিন্নতা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক উপাদান, তবে ব্যক্তিগত মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, ধর্মীয় বা সামাজিক পরিচয় বহনকারী ব্যক্তি যখন অশালীন বা অবমাননাকর কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন, তখন তা সামাজিক মূল্যবোধের ওপর গুরুতর আঘাত সৃষ্টি করে। সকলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা বজায় রাখা সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার অন্যতম শর্ত—এ বিষয়টিও তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
এদিকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার, যা সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। তিনি উল্লেখ করেন, মানবাধিকারকে কখনো রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় এবং মত, বিশ্বাস বা রাজনৈতিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে কারও অধিকার হরণ করা নৈতিক কিংবা আইনসম্মত নয়।
তার বক্তব্যে বলা হয়, সামাজিক সমতা, ন্যায়বিচার এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে মানবাধিকার সুরক্ষা অপরিহার্য। এ ধরনের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা শুধু ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, মানবাধিকার রক্ষায় প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন, বিশেষত সমাজের বিভিন্ন স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমগ্র দেশের জনগণকে মানবাধিকার রক্ষায় সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, একটি ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা, সামাজিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সামগ্রিকভাবে, তার দুইটি বিবৃতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ, প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার এবং মানবাধিকার সুরক্ষার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল পরিবেশে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা, পরিচয়ের সুরক্ষা এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষায় সামগ্রিক সামাজিক ভূমিকার গুরুত্বও তার বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়। এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপসংস্কৃতি প্রতিরোধ, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক যোগাযোগ পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বানও পরোক্ষভাবে প্রতিফলিত হয়।