রাজনীতি ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি নির্বাচনী প্রচারণার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে তাঁর সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক সহকর্মীরা জানিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকেরা তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, আহত অবস্থায় তাঁকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় হাদি কীভাবে আহত হয়েছেন, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, প্রার্থীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর তারা পেয়েছেন, তবে ঘটনাস্থল সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, বিজয়নগর এলাকায় ঘটনার কথা শোনা গেছে এবং বিষয়টি যাচাই করতে পুলিশ টিম পাঠানো হয়েছে। টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
হাদির সহকর্মীরা ঢামেকের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাদির রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং তাঁর জন্য বি নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন। তাঁরা জানান, ঘটনাটি ঘটে নির্বাচনী প্রচারণার সময়, যখন মোটরসাইকেলে করে আসা দুই ব্যক্তি হঠাৎ এসে গুলি করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তাঁদের ধারণা, হামলাটি পরিকল্পিত ছিল এবং লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। সহকর্মীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং তাঁর অবস্থা গুরুতর হতে পারে। চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করে পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় থাকার কারণে শরিফ ওসমান হাদি এর আগেও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। গত নভেম্বর মাসে তিনি দাবি করেছিলেন, অজ্ঞাতনামা দেশি-বিদেশি ৩০টি নম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি পেয়েছেন। ১৪ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁকে হত্যা, তাঁর বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং পরিবারের নারী সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব হুমকির বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অবগত করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন।
হাদির এই দাবিগুলো সে সময় রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দেয়। নির্বাচনী পরিবেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্রচারণা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি তাঁর পূর্বের নিরাপত্তাজনিত অভিযোগগুলোকে পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এই হামলার সঙ্গে পূর্বে প্রাপ্ত হুমকির কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা স্পষ্ট হতে সময় লাগবে।
ঘটনার পর বিজয় নগর এলাকা ও আশপাশের অংশে নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। হামলার ধরন, ব্যবহৃত অস্ত্র, এবং মোটরসাইকেলে আসা ব্যক্তিদের গতিপথ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে বিশেষ দল কাজ করছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা সশস্ত্র হামলা ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আরো জোরদারের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, এই ঘটনার সত্যতা, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে একে টার্গেটেড আক্রমণ কিনা বা নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা কিনা, এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হবে। হামলার সময় মোটরসাইকেলে দু’জন ব্যক্তি থাকার তথ্য বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, হাদির শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করে প্রয়োজন হলে তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হতে পারে। রক্তের প্রয়োজনীয়তা থাকায় তাঁর সহকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে রক্তদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাথায় গুলিবিদ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হয়।
ঘটনাটি রাজধানীতে নির্বাচনী পরিবেশকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালানো ব্যক্তির ওপর এ ধরনের হামলা নিরাপত্তা প্রস্তুতি এবং নজরদারি কতটা কার্যকর তা নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি এবং হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে উদ্বেগ অব্যাহত থাকবে।