রাজনীতি ডেস্ক
তফসিল ঘোষণার পরদিন এক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনাকে গভীর উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এর সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং হামলার পেছনের শক্তি কারা—তা জাতির সামনে স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন শরিফ ওসমান হাদিকে দেখতে গিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তফসিল ঘোষণার ঠিক পরের দিন একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এ ধরনের সহিংস ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও জননিরাপত্তার জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি, কারা এর পেছনে রয়েছে—সে বিষয়ে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে জাতির সামনে তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
হাসপাতালে পরিদর্শনকালে জামায়াত আমির আহত শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, বর্তমানে আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ সময় তিনি দেশবাসীর কাছে আহত প্রার্থীর দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বা মতপার্থক্যের কারণে সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনকালীন সময়ে এ ধরনের ঘটনা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশের পরিপন্থী। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক কর্মীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তা পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
হাসপাতালে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল, মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামান এবং ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ হাজি মুহাম্মদ এনায়েত উল্লাহসহ দলটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা আহত প্রার্থীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেন।
এর আগে শনিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা মতভিন্নতার কারণে সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানান এবং আহত ব্যক্তির পূর্ণ সুস্থতা কামনা করেন।
শরিফ ওসমান হাদি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের প্রচারণা ও রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার তদন্ত, হামলাকারীদের পরিচয় এবং পেছনের প্ররোচনাকারীদের শনাক্ত করার বিষয়টি এখন রাজনৈতিক ও জনস্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ।