জাতীয় ডেস্ক
দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনৈতিক দাবি ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচন ব্যাহত করার যেকোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচাল করার মতো শক্তি পৃথিবীতে নেই এবং জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেওয়ার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষা করছে।
আজ শুক্রবার শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর দরবার শরিফ জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেসসচিব এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের প্রশাসনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার মতে, একটি স্থিতিশীল ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার, এবং এ প্রক্রিয়া ব্যাহত করার যেকোনো উদ্যোগ আইনের আওতায় কঠোরভাবে দমন করা হবে।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, দেশের নাগরিকেরা ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে কোনো অসাংবিধানিক বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি বা অরাজকতা তৈরির উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে শফিকুল আলম জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনকালীন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। যারা আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করবে বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অবৈধ দাবির মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রেসসচিব বলেন, নির্বাচনী কার্যক্রমে নিষিদ্ধ থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে আইন ও বিধিমালায় যা নির্ধারিত আছে, সেটিই অনুসরণ করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, নিষিদ্ধ দলগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে স্বেচ্ছায় নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে এবং বর্তমান বিধি অনুযায়ী তাদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তিনি জানান, সরকার নির্বাচন কমিশনের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
এর আগে জিয়ারত শেষে প্রেসসচিব স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেন। তিনি জানান, নির্বাচনী পরিবেশ শৃঙ্খলাপূর্ণ রাখতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন।
প্রেসসচিব আশা প্রকাশ করেন যে নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণ স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, জনগণের অংশগ্রহণমূলক উৎসাহই নির্বাচনের মূল শক্তি এবং নির্বাচন কমিশন সেই জনগণকে স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ ও অবাধ পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শফিকুল আলম আরও জানান, সরকার নির্বাচনকালীন শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি অবৈধভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত বা সহিংস করার চেষ্টা করে, তবে আইনি বিধান অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে।
আসন্ন নির্বাচনের আগে সরকারের এমন বার্তা রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ ভোটারের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করেছে। প্রেসসচিবের বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে সরকার নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনে অঙ্গীকারবদ্ধ, এবং এ প্রক্রিয়া ব্যাহত করার যেকোনো উদ্যোগ কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।