রাজনীতি ডেস্ক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসনে থাকা তারেক রহমানের ফেরার বিষয়টি সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এবার দলীয়ভাবে তার আগমনের তারিখ জানানো হলো।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রায় ১৮ বছর পর তারেক রহমান দেশে ফিরতে যাচ্ছেন। তিনি জানান, দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান সত্ত্বেও দল পরিচালনা ও বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তারেক রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন। মহাসচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং সাংগঠনিক যোগাযোগে তারেক রহমান দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি এই প্রত্যাবর্তনকে রাজনৈতিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছে।
তারেক রহমানের নির্বাসন ও বিদেশে অবস্থানের প্রেক্ষাপট সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন মামলার প্রক্রিয়া, দেশীয় রাজনীতির পরিবর্তন এবং দলের সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেশে ফেরা বিএনপির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে দলীয় নেতারা মনে করছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে কেবল তারেক রহমানের আগমনের তারিখ ও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের আগমনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও এ প্রস্তুতির নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা সম্ভাব্য কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য দেননি। সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার একটি ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার প্রত্যাশা করছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার দেশে ফেরা দলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামো, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কর্মসূচির ধরন ও দলীয় কৌশলে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতি, জোটভিত্তিক সমন্বয়, আন্দোলন-সংক্রান্ত কর্মসূচি এবং সাংগঠনিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে এ আগমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এসব সম্ভাবনা সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা, আইনগত প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। দেশে ফিরলে তার বিদ্যমান মামলাগুলোর আইনগত অবস্থান কীভাবে পরিচালিত হবে—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, তার দেশে ফেরা মামলাগুলোর অগ্রগতিতে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এবিষয়ে কোনও সরকারি সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এখনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
এদিকে তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে প্রত্যাশা ও প্রস্তুতির পরিবেশ তৈরি করেছে। দলীয় বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা কেন্দ্রীয় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তুতির ধরন বা সম্ভাব্য জনসমাবেশ সম্পর্কে কোনও তথ্য জানানো হয়নি। দলটির মহাসচিব কেবল জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা জানানো হবে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই আগমন কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক অঙ্গনের সামগ্রিক গতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন, দলীয় পুনর্গঠন বা ভবিষ্যৎ আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যাবে—তা অনেকটাই নির্ভর করবে তার দেশে ফেরার পর দলীয় সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে দলের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি জানান, তার ফেরার দিন বিমানবন্দরে দলের নির্ধারিত প্রতিনিধি দল উপস্থিত থাকবে। এর বাইরে সম্ভাব্য কর্মসূচি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুযায়ী যথাসময়ে সব তথ্য জানানো হবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো, বিভিন্ন পর্যবেক্ষক এবং সাধারণ জনগণ বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তার আগমন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী প্রভাব ফেলবে—তা নির্ভর করবে পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আইনি প্রক্রিয়া এবং দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর।