জেলা প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখেরআলী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত তসিকুল ইসলামের মরদেহ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে সদর উপজেলার জোহরপুর-টেক সীমান্ত দিয়ে মরদেহটি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৫৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকমল চন্দ্র দেবনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যদের উপস্থিতিতে ভারতের স্থানীয় পুলিশ মরদেহটি বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মরদেহ হস্তান্তরের আগে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মরদেহ পরীক্ষা করে ডান কাঁধ থেকে বুকে ছররা গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গুলিবিদ্ধ হয়েই তসিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতেই মরদেহটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ভোরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখেরআলী সীমান্তের ওপারে ভারতের অংশে অবস্থিত ভাগিরথী নদী থেকে তসিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে ভারতের পুলিশ। উদ্ধারকৃত মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় এবং পরবর্তী সময়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে মরদেহ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

নিহত তসিকুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখেরআলী গ্রামের বাসিন্দা এবং ইব্রাহিম আলীর ছেলে। স্থানীয় সূত্র ও বিজিবির প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। এ সময় সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে তিনি নিহত হন বলে জানানো হয়েছে। তবে ঠিক কী পরিস্থিতিতে গুলির ঘটনা ঘটে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

বিজিবি সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা এড়াতে নিয়মিত টহল ও নজরদারি কার্যক্রম জোরদার রাখা হলেও অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান সংক্রান্ত কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জীবিকা, সামাজিক বাস্তবতা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার একটি সংবেদনশীল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। অতীতে সীমান্তে গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত বা আহত হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বৈঠক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলেও স্থানীয় পর্যায়ে অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষের ঝুঁকি পুরোপুরি দূর হয়নি।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তসিকুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। মরদেহ গ্রহণের পর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে এবং ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে আইন মেনে চলা এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করার জন্য পুনরায় সতর্ক করা হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদারের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে সীমান্ত এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি এবং দ্বিপক্ষীয় সমন্বয় আরও কার্যকর করা জরুরি।