জেলা প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসের নিচতলায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ালেও নাইটগার্ডদের তৎপরতায় বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসায় অফিসের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও চলমান প্রশাসনিক কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ভোরে এক ব্যক্তি দেয়াল টপকে জেলা নির্বাচন অফিস চত্বরে প্রবেশ করে। এরপর নিচতলার স্টোর রুমে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই অফিসে দায়িত্বরত নাইটগার্ডরা বিষয়টি টের পান এবং তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাদের দ্রুত পদক্ষেপে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
অগ্নিকাণ্ডে স্টোর রুমে সংরক্ষিত ২০০৮ ও ২০০৯ সালের ভোটার ফরম পুড়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এর বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো দাপ্তরিক নথি, যন্ত্রপাতি বা অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। আগুন সীমিত পরিসরে থাকায় জেলা নির্বাচন অফিসের দৈনন্দিন কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেনি।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, অফিসে উপস্থিত কর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে আগুন নেভাতে সক্ষম হওয়ায় বড় ক্ষতি এড়ানো গেছে। তিনি বলেন, পুরোনো কিছু ভোটার ফরম পুড়ে গেলেও বর্তমানে ব্যবহৃত নথি ও সরঞ্জাম অক্ষত রয়েছে। ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক এস এম মেহেদী হাসান জানান, এ ঘটনার পর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের অফিস, জেলা নির্বাচন অফিসসহ জেলার সব নির্বাচন অফিসে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন অফিস এলাকা পরিদর্শন করে। সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দুর্বৃত্তকে শনাক্ত ও আটক করার চেষ্টা চলছে। অগ্নিসংযোগের উদ্দেশ্য ও পেছনের কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নির্বাচন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন অফিস একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ভোটার তালিকা ও নির্বাচনসংক্রান্ত নথি সংরক্ষণের বিষয়টি সংবেদনশীল। যদিও এবার ক্ষয়ক্ষতি সীমিত, তবুও ভবিষ্যতে এমন ঘটনার ঝুঁকি কমাতে প্রহরা জোরদার, আলোকসজ্জা বৃদ্ধি এবং নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন অফিস এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রহরা মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাতের দায়িত্বে থাকা জনবল ও দায়িত্ব বণ্টন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
এদিকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।