নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এ ঘটনাকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বলে মন্তব্য করেন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পরপরই একজন সম্ভাব্য সংসদ সদস্যের ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক। তার ভাষায়, হামলার ধরন ও সময় নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তিনি দাবি করেন, এ ধরনের হামলা ব্যক্তি বা দলের ওপর নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশের ওপর আঘাত।
হামলায় আহত শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা জানান, তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে। তিনি হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে হামলার পেছনে কারা জড়িত, তা নিরপেক্ষ ও পেশাদার তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত উদ্ঘাটনের দাবি জানান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, বৈঠকে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও এমন কোনো অবস্থান গ্রহণ করা হবে না, যা এই ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে—এ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্ক ও প্রতিযোগিতা থাকবে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক অংশ। তবে এসব বিতর্ক যেন সহিংসতা বা অস্থিতিশীলতার দিকে না যায়, সে বিষয়ে সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার পটভূমিতে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, যা রক্ষা করা বর্তমান সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি উল্লেখ করেন, এই ঐক্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়।
হামলার পেছনে কারা থাকতে পারে—এ বিষয়ে সরাসরি কোনো গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ না করলেও তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে যারা বিশ্বাস করে না, তারাই এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তার মতে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়েই এমন শক্তি থাকতে পারে, যারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে চায়। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে থামানো যাবে না বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নির্বাচনকে অর্থবহ করা সম্ভব। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে এবং একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৎপরতা বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক কর্মীর ওপর সহিংস হামলার ঘটনা নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সহনশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা বজায় থাকবে।