আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ায় সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস)-এর এক বন্দুকধারীর অতর্কিত হামলায় দুইজন মার্কিন সেনা এবং একজন মার্কিন বেসামরিক দোভাষী নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আরও তিনজন মার্কিন সেনা আহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সেনা কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অভিযুক্ত বন্দুকধারী নিহত হন।
সেন্টকম জানায়, হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং একক বন্দুকধারীর মাধ্যমে পরিচালিত একটি অ্যামবুশ। নিহতদের পরিচয় আপাতত প্রকাশ করা হচ্ছে না। নিহতদের নিকটাত্মীয়দের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত না করা পর্যন্ত অন্তত ২৪ ঘণ্টা তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। আহত তিনজন সেনাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র জানান, সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলের ঐতিহাসিক শহর পালমিরা এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় সেখানে অবস্থানরত মার্কিন সেনারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, হামলাটি আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি এবং হামলাকারীর পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি।
এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে পরিচালিত আইএসআইএসের হামলা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সিরিয়ার সরকার এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।
পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা বলেন, হামলাটি এমন একটি অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে যেখানে সিরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ সীমিত। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সক্রিয়তা রয়েছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। মার্কিন সামরিক সূত্রগুলো জানায়, ঘটনাস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং হামলার পেছনের নেটওয়ার্ক শনাক্তে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা দাবি করেছে, হামলাকারী ব্যক্তি সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে এই দাবির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে হামলাকারীর পরিচয় ও সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি মূলত আইএসআইএসের পুনরুত্থান ঠেকানো এবং স্থানীয় অংশীদার বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক জোটের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আইএসআইএসবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও বিচ্ছিন্ন হামলা এবং গোপন সেল সক্রিয় থাকার বিষয়টি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে।
এই হামলার পর সিরিয়ায় অবস্থানরত বিদেশি বাহিনীগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে আইএসআইএসের সক্ষমতা ও তাদের অবশিষ্ট নেটওয়ার্ক নিয়ে নতুন করে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে না। তবে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে শোক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই ঘটনার ফলাফল হিসেবে সিরিয়ায় চলমান সামরিক সমন্বয়, নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ অভিযানের কৌশলে পরিবর্তন আসতে পারে। পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর।