নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় এএমজেড হাসপাতালের সামনে যাত্রীবাহী অছিম পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কয়েকজন ব্যক্তি যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুন ধরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় বাসে যাত্রীরা উঠানামা করছিলেন, ফলে মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর যাত্রীরা দ্রুত বাস থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে সরে যান। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা কমে আসে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বারিধারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও নির্বাপণ কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে বাসটির একটি অংশ পুড়ে যায়, তবে বড় ধরনের বিস্তার ঘটেনি।

ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, অগ্নিসংযোগের ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে এটি পরিকল্পিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর নিশ্চিত করা হবে। আগুন নেভানোর পাশাপাশি আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।

বাড্ডা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। অগ্নিসংযোগে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ বলছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার পরপরই এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। উত্তর বাড্ডা ও আশপাশের সড়কে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বাসচালক ও পরিবহন শ্রমিকরা জানান, যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে এবং গণপরিবহনে স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে চলন্ত যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য গুরুতর হুমকি। এ ধরনের ঘটনায় প্রাণহানির ঝুঁকি যেমন থাকে, তেমনি যানবাহন ও অবকাঠামোর বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। তাই তদন্তের পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে এবং যাত্রীদের সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

উত্তর বাড্ডার ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও, নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত তৎপরতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।