নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ বাদী হয়ে এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দায়েরের পরপরই সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

অভিযোগে অভিযুক্ত চারজন হলেন সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মারিয়া কিশপট্ট এবং ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ। থানাসূত্র জানায়, অভিযোগটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।

দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলেও তাঁর অনুসারীরা দেশে অবস্থান করে বিভিন্ন কৌশলে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছেন। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এর মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, অবকাঠামোর ক্ষতিসাধন এবং রাজনৈতিকভাবে একটি নির্দিষ্ট দলকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়।

অভিযোগকারী পক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব কার্যক্রম রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ এবং তা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য। অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

এদিকে অভিযোগ দায়েরের পর সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানার জন্য তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি কয়েকটি বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে কয়েকটি বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি সম্পর্কে পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কোনো অভিযোগ এলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হয় অভিযোগের সত্যতা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা এবং অভিযোগে উল্লিখিত কর্মকাণ্ডের আইনগত ভিত্তি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ, ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আলামত সংগ্রহ করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমভিত্তিক প্রচারণা ঘিরে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে নিষিদ্ধ সংগঠন বা সহিংসতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রচারণা থাকলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তদন্তের সুযোগ রয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে আইনের দৃষ্টিতে নির্দোষ হিসেবে গণ্য করা হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত অন্যদের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য এ মুহূর্তে প্রকাশ করা হচ্ছে না। তদন্ত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং প্রয়োজন হলে আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে।