নিজস্ব প্রতিবেদক
মহান বিজয় দিবসের ৫৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পুষ্পস্তবক অর্পণের পর কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করেন। এ সময় জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে এক গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়, যা বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার গুরুত্ব এবং শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি জাতির চিরকৃতজ্ঞতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ছয়টি গান ব্যবহার করে ৩১ বার তোপধ্বনি প্রদান করা হয়। এই তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করা হয়, যা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিজয় দিবস উদযাপনের একটি ঐতিহ্যবাহী অংশ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এ যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ শহীদ হন এবং অসংখ্য মানুষ আহত ও নির্যাতনের শিকার হন। মহান বিজয় দিবস জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এ দিনটি স্মরণে রাখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা তুলে ধরতে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, আলোকসজ্জা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির ইতিহাস ও আত্মত্যাগের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের মধ্যে আরও সুদৃঢ় হয়। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শীর্ষ নেতৃত্বের অংশগ্রহণ জাতীয় ঐক্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার বার্তা বহন করে।
মহান বিজয় দিবস কেবল একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, বরং এটি গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ রক্ষার অঙ্গীকারের প্রতীক। বীর শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে দায়িত্বশীলতা, দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অবিচল থাকার আহ্বান জানানো হয় এই দিনে।