নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার যে প্রত্যাশা ছিল, তা দীর্ঘ সময়েও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। এই অপূর্ণতার প্রেক্ষাপটেই সাম্প্রতিক সময়ে গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষায়, দেশ বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখান থেকে পুরোনো শাসনব্যবস্থাকে পেছনে ফেলে গণতন্ত্রের পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি জানান, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও যদি একটি গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন হয়, তবে তা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রীয় স্বপ্ন ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, রাষ্ট্র তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এই বাস্তবতা স্বীকার করেই ভবিষ্যৎ যাত্রার ভিত্তি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শক্ত ভিত্তি নির্মাণের প্রত্যাশা করছে সরকার। তাঁর মতে, এই নির্বাচন শুধু সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নয়, বরং গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করা এবং সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহির আওতায় আনতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। একই সঙ্গে তিনি জানান, বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের যে লক্ষ্য স্বাধীনতার সময় নির্ধারিত হয়েছিল, তা এখনও সম্পূর্ণভাবে অর্জিত হয়নি। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই লক্ষ্যের দিকে নতুন করে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
রাজনৈতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে যুক্তি ও গণতান্ত্রিক বিতর্কের পরিবর্তে সহিংস পন্থা গ্রহণের প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। হত্যাচেষ্টা বা সহিংসতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকে তিনি নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক শক্তির প্রকৃত পরীক্ষা হয় জনগণের মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমে, সহিংসতার মাধ্যমে নয়। এই ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নতুন বাংলাদেশের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার গণতান্ত্রিক যাত্রাকে সুদৃঢ় করার প্রত্যাশা করছে। তাঁর ভাষায়, এই নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল জনপ্রতিনিধি নির্বাচনই হবে না, বরং সংস্কারসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। নির্বাচনের ফল ও জনগণের অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের যাত্রার ধরন নির্ধারিত হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে সাফল্য বা ব্যর্থতার প্রচলিত মানদণ্ডে বিচার করা উচিত নয়। তিনি ব্যাখ্যা করেন, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়া অবস্থায় ছিল এবং সেই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রকে পুনরায় কার্যকর পথে ফিরিয়ে আনার কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া এবং কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারলেই প্রকৃত অর্থে সফলতা মূল্যায়ন করা যাবে।
নিরাপত্তা প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রতিপক্ষের সংগঠিত কর্মকাণ্ড ও পেছন থেকে আঘাতের আশঙ্কার কারণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সরকার জনগণকে আশ্বস্ত রাখতে কাজ করছে, যাতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি না হয়।
নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, সরকারের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য কিছু শক্তি সক্রিয় রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।