নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয়ভাবে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, যাতে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, এবারের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের বৈশ্বিক তাৎপর্য এবং জাতীয় প্রবাসী দিবসের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান। অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, অভিবাসন খাতের বিশেষজ্ঞ, প্রবাসী কল্যাণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর পালিত হলেও বাংলাদেশে প্রবাসী নাগরিকদের অবদানকে বিশেষভাবে সম্মান জানাতে একই সময়ে জাতীয় প্রবাসী দিবস উদযাপন করা হয়। এই দিবস দুটির মাধ্যমে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে অভিবাসীদের অধিকার, নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং টেকসই অভিবাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সেটিও এই আয়োজনের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারের নীতিগত উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোকপাত করবেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা এবং দেশে ফেরত আসা অভিবাসীদের পুনর্বাসন—এই বিষয়গুলো তার বক্তব্যে গুরুত্ব পেতে পারে। একই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রম অভিবাসনকারী দেশ। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক সংকট এবং শ্রমবাজারের পরিবর্তনের কারণে অভিবাসন খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানকে নীতিনির্ধারক ও অংশীজনদের জন্য মতবিনিময় ও দিকনির্দেশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য পর্বে অভিবাসন খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন, প্রবাসী কল্যাণে গৃহীত সরকারি কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন, আইনি সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান উদ্যোগগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও আলোকপাত করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই ধরনের রাষ্ট্রীয় আয়োজন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সরকারের সংযোগ আরও দৃঢ় করতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও প্রবাসী কল্যাণ নীতির প্রতি আস্থা বাড়াতে এ দিবসগুলোর তাৎপর্য রয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ও ঘোষণাসমূহ ভবিষ্যতে অভিবাসন খাতে নীতিগত সিদ্ধান্ত ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশা প্রকাশ করছে।