আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলায় আসা-যাওয়া করা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেলবাহী ট্যাংকারগুলো অবরোধের আওতায় পড়বে। তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে উল্লেখ করেছেন, ভেনেজুয়েলার তেল ও অন্যান্য সম্পদ ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এই পদক্ষেপ চলমান থাকবে। মার্কিন নৌবহর ইতিমধ্যেই ক্যারিবীয় অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে, যার মধ্যে একটি বৃহৎ বিমানবাহী রণতরীও অন্তর্ভুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কয়েক মাস ধরে চলা ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতির অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন মাদক পাচার রোধের অজুহাত দেখিয়ে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে, যদিও ভেনেজুয়েলা ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে মূল উদ্দেশ্য হলো বামপন্থি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ মাদুরোকে অবৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলা থেকে ছেড়ে আসা একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুনভাবে অবরোধ কার্যকর হলে দেশটির ইতিমধ্যেই ভঙ্গুর অর্থনীতি আরও সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, তেলের সরবরাহে বাধা সরাসরি ভেনেজুয়েলার আভ্যন্তরীণ বাজার ও আন্তর্জাতিক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা সাধারণ জনগণ ও শিল্পখাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বে সর্বোচ্চ। ওপেকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মজুত তেলের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ৩০০ কোটি ব্যারেল। আন্তর্জাতিক বাজারে এই মজুতের গুরুত্ব অত্যন্ত বড়, তাই তেলবাহী জাহাজের অবরোধ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দেশটির রপ্তানি আয়ের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগও হ্রাস পেতে পারে।
বিশ্লেষকরা আরও জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে এবং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং সরবরাহ শৃঙ্খলেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই সংকটাপন্ন, এবং নতুনভাবে অবরোধ আরোপ হলে খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি সরবরাহ এবং সরকারি আয় হ্রাসের মতো বিষয়গুলো গুরুতর প্রভাবিত হতে পারে।
অবস্থা বিবেচনা করে, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল এই সংকট নিরসনের জন্য সম্ভাব্য আলোচনার পথ খুঁজছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভেনেজুয়েলার মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে তেলের সরবরাহ ও অর্থনৈতিক চাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধান না হলে, ভবিষ্যতে এই অবরোধ আরও দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল আকার নিতে পারে।