বিনোদন ডেস্ক
জনপ্রিয় ভারতীয় সংগীতশিল্পী কুমার শানু তার প্রাক্তন স্ত্রী রীতা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে মুম্বাই হাইকোর্টে মামলা করেছেন। প্রাক্তন স্ত্রীর প্রকাশ্য বক্তব্যে নিজের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ লাখ রুপি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে বিতর্কিত বক্তব্য সংবলিত অনলাইন কনটেন্ট অপসারণের নির্দেশ চেয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, বিচ্ছেদের প্রায় দুই দশক পর সাম্প্রতিক সময়ে একটি সাক্ষাৎকারে রীতা ভট্টাচার্য কুমার শানুর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেন। ওই বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, গর্ভাবস্থায় থাকার সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যয়ের সহায়তা পাননি। তিনি আরও বলেন, জীবনধারণের প্রয়োজনে নিজের গয়না বিক্রি করতে হয়েছিল এবং কুমার শানুর ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল।
এসব অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে কুমার শানু আদালতে দাখিল করা আবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, উত্থাপিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার দাবি, দীর্ঘ চার দশকের সংগীতজীবনে তিনি যে পেশাগত সুনাম ও জনআস্থা গড়ে তুলেছেন, তা ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যেই এসব বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়, অভিযোগগুলো জনসমক্ষে প্রচারিত হওয়ায় তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত মর্যাদার ক্ষতি হয়েছে।
কুমার শানুর পক্ষে তার আইনজীবী সানা রইস খান আদালতে জানান, এই বক্তব্যগুলোর কোনো প্রামাণ্য ভিত্তি নেই এবং এগুলো মানহানিকর। আইনি নোটিশে সংশ্লিষ্ট বক্তব্যসমূহ প্রচার থেকে বিরত রাখা এবং অনলাইনে থাকা ভিডিও বা উপাদান অপসারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। আদালতে দাখিল করা নথিতে ক্ষতিপূরণের দাবি ছাড়াও ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
মামলার প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করা হয়, কুমার শানু ও রীতা ভট্টাচার্যের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে প্রায় ২০ বছর আগে। বিচ্ছেদের পর উভয়ের জীবন আলাদা পথে এগিয়ে গেলেও সাম্প্রতিক বক্তব্যের মাধ্যমে পুরোনো বিরোধ নতুন করে সামনে আসে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কুমার শানুর পক্ষ থেকে রীতাকে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে নোটিশের পরও কোনো সমঝোতা বা প্রত্যাহার না হওয়ায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, মানহানির মামলায় আদালত অভিযোগের সত্যতা, বক্তব্যের প্রেক্ষাপট, প্রকাশের মাধ্যম এবং সম্ভাব্য ক্ষতির মাত্রা বিবেচনা করে থাকে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ইতিহাস থাকলেও জনসমক্ষে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তা মানহানির আওতায় পড়তে পারে। এ ধরনের মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণ, বক্তব্যের ভাষা ও উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই মামলার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে ব্যক্তিগত বিরোধ ও প্রকাশ্য বক্তব্যের আইনি পরিণতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আদালতের পরবর্তী শুনানিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য ও উপস্থাপিত প্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টির অগ্রগতি নির্ধারিত হবে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগগুলো আদালতের বিবেচনাধীন বিষয় হিসেবে থাকবে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।