জেলা প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জে শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় ৭ বছরের শিশু আয়েশা বেগম বিনতি মারা যান। পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ হন বেলাল হোসেন ও তার দুই কন্যা বিথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তার। গুরুতর আহত দুই কন্যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা এলাকায় নিজ বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ঘুমাচ্ছিলেন বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন। তখন ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং শিশুসহ পরিবারের তিনজন অগ্নিদগ্ধ হন। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দুই কন্যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার দাস জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি বলেন, “এক শিশু নিহত হয়েছেন এবং তিনজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর।”
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদ পারভেজ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং অগ্নিদগ্ধদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আগুনের প্রকৃত কারণ ও পরিকল্পিত নাশকতা 여부 তদন্ত করা হচ্ছে।”
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজাদ হোসেন বলেন, বেলাল হোসেন ইউনিয়নের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ঘটনাস্থল ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, অগ্নিদগ্ধ দুই কন্যার শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে এবং তাদের অবস্থা আশংকাজনক। স্থানীয়রা জানায়, আগুনের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে মুহূর্তের মধ্যে পুরো ঘর ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়।
নিহত শিশু আয়েশা বেগম বিনতির বয়স মাত্র ৭ বছর। স্থানীয়রা বলছেন, শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনের তীব্রতায় মারা যান। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা দ্রুত কার্যক্রম শুরু করেছেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বা অন্য কোনো আক্রমণের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতারা সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরে এই ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বিরল হলেও, রাজনৈতিক সংখ্যালঘু ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগ আগেও উঠেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদানেরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।
এই ঘটনা এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। স্থানীয় জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতারা সবাই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।