আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এর ফলে রবিবার (২১ ডিসেম্বর) থেকে আরবি বর্ষপঞ্জিকার সপ্তম মাস রজব শুরু হচ্ছে। রজব মাসের সূচনার মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বে পবিত্র রমজান মাসের প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিক ক্ষণগণনাও শুরু হয়েছে।
চাঁদ দেখা যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর চাঁদ দেখা কমিটি ও ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে হিজরি মাসের সূচনা নির্ধারিত হয়, যা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে ভৌগোলিক অবস্থান ও স্থানীয় চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে মাস শুরুর তারিখে একদিনের পার্থক্য দেখা দিতে পারে।
ইসলামি ক্যালেন্ডারের চারটি সম্মানিত বা পবিত্র মাসের মধ্যে রজব অন্যতম। অন্য তিনটি পবিত্র মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। কোরআন ও হাদিসে এসব মাসের বিশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে এ মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা এবং ইবাদত-বন্দেগির প্রতি অধিক মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ফলে রজব মাস মুসলিমদের ধর্মীয় জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত।
রজব মাসকে ঘিরে মুসলিম সমাজে বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব বিদ্যমান। এই মাস থেকেই মূলত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয় বলে অনেকে মনে করেন। রজব ও এর পরবর্তী মাস শা’বান—এই দুই মাসকে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতির সময় হিসেবে ধরা হয়। এ সময় মুসলমানরা নফল ইবাদত বৃদ্ধি, আত্মশুদ্ধি, দান-সদকা এবং নৈতিক প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ দেন। ধর্মীয় শিক্ষাবিদদের মতে, এই প্রস্তুতি রমজানের ফরজ রোজা ও অন্যান্য ইবাদত সুষ্ঠুভাবে পালনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ইসলামি ইতিহাস অনুযায়ী, রজব মাসের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ইসরা ও মেরাজ, যা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। যদিও এ ঘটনার নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবুও রজব মাসকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে ইবাদত ও স্মরণ বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন দেশে মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং পারিবারিক পরিসরে এ মাসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা ও ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ইসলামি মাস নির্ধারণ হওয়ায় রজব ও শা’বান মাসের মোট দৈর্ঘ্য ২৯ অথবা ৩০ দিন হতে পারে। যদি রজব ও শা’বান—এই দুই মাস পূর্ণ ২৯ বা ৩০ দিন করে সম্পন্ন হয়, তবে হিসাব অনুযায়ী আগামী ৬০ থেকে ৬১ দিনের মধ্যেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রমজান শুরুর সুনির্দিষ্ট তারিখ চাঁদ দেখার ওপরই নির্ভর করবে, যা সংশ্লিষ্ট সময়ে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে।
রমজান মুসলিমদের জন্য সিয়াম, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারসহ সব ধরনের ভোগ-বিলাস থেকে বিরত থেকে ফরজ রোজা পালন করা হয়। পাশাপাশি তারাবিহ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা ও সামাজিক সংহতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই রজব মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম বিশ্বে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনা জোরদার হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে রমজান উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয় সাধারণত রজব মাস থেকেই। খাদ্য সরবরাহ, বাজার ব্যবস্থাপনা, ধর্মীয় শিক্ষা কার্যক্রম এবং মসজিদকেন্দ্রিক উদ্যোগগুলো ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে থাকে। এ কারণে রজব মাসের সূচনা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, সামাজিক ও প্রশাসনিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।