নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পর বিচার নিশ্চিতের দাবিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ওই পোস্টে তিনি এ বক্তব্য দেন।
পোস্টে ইশরাক হোসেন বলেন, শহিদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং এ হত্যাকাণ্ডের পর দেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন শনিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে শহিদ শরীফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মী এবং নিহতের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বিপুলসংখ্যক মানুষ জানাজায় শরিক হন।
শহিদ শরীফ ওসমান হাদি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে নিন্দা জানানো হয় এবং দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ওঠে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত কার্যক্রম জোরদারের কথা জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইশরাক হোসেন তার বক্তব্যে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং এর মাধ্যমে সহিংসতার সংস্কৃতি বন্ধ করা জরুরি। তিনি আইন ও বিচার ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা।
হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহল থেকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে জনমনে আস্থা ফিরবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমাতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সব পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।
এদিকে, শহিদ শরীফ ওসমান হাদির জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, সহিংসতার পথ পরিহার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এ ধরনের সংকট মোকাবিলা সম্ভব। তারা দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।