জাতীয় ডেস্ক
নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার বিষয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার কারণে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বহুবার আলোচনা, কমিশন গঠন এবং সরকারি আশ্বাসের পরও নবম পে স্কেলের চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ না হওয়ায় কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। এ পরিস্থিতিতে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ’।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং বর্তমান রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নতুন আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা না করে শহীদ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈষম্যমুক্ত নবম পে স্কেলের সুপারিশসহ গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, ১ জানুয়ারির মধ্যে পে স্কেল বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা শহীদ ওসমান হাদিকে স্মরণ করে বলেন, তিনি আজীবন সরকারি কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার দেখানো পথ অনুসরণ করে সরকারি কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা দেশের সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের মধ্যে চলমান অনিশ্চয়তা এবং পে স্কেল বাস্তবায়নে সরকারের দেরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা আরও বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হলে কর্মদক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারি সেবা প্রদান আরও উন্নত হবে।
সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের জন্য পে স্কেল সংশোধনের বিষয়টি দেশে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। গত কয়েক বছরে পে স্কেল বাস্তবায়নে বারবার দেরি এবং বৈষম্যমূলক প্রস্তাবনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈষম্যমুক্ত এবং সময়োপযোগী বেতন কাঠামো নিশ্চিত করা হলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি পাবে এবং সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
সংগঠনটি আগেই বলেছে, বৈষম্যমুক্ত পে স্কেলের দাবিতে তারা প্রয়োজনীয় আন্দোলন চালিয়ে যাবে এবং প্রয়োজন হলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে। কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর সরকার বিষয়টি কার্যকরভাবে সমাধান করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী অনিশ্চয়তা দূর করবে।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতারা জানান, আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো সরকারি কর্মক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং সকল কর্মচারীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। তারা বলছেন, এই আন্দোলন কেবল বেতন কাঠামোর বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস ও সরকারি সেবার মান উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করবে।