নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত সহিংসতার অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান। তাঁর দাবি, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে বিএনপির আয়োজিত এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অংশ, যার লক্ষ্য ছিল আসন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করা এবং তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় যাঁরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন, শরীফ ওসমান হাদি তাঁদের অন্যতম। তাঁর ওপর হামলার মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার প্রয়াস হিসেবে দেখা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আবিদুল ইসলাম খান আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, কিছু গোষ্ঠী একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন এলাকায় হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চলছে।
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা। তাঁর মতে, যারা নির্বাচন চায় না, তারাই সহিংসতা ও অস্থিরতার পথ বেছে নিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সুবিধা নেওয়া কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে বর্তমান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
আবিদুল ইসলাম খান তার বক্তব্যে দাবি করেন, রাজনৈতিক সহিংসতার মাধ্যমে কোনো পক্ষই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। তিনি বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যা গণতান্ত্রিক ধারার মধ্য দিয়েই বাস্তবায়িত হবে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার মতো কোনো শক্তি বর্তমানে সক্রিয় নেই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন পরিবেশ এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। তারা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহিংসতা ও উত্তেজনাকর কর্মকাণ্ড পরিহার করে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার ভূইয়া দোলন। এতে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শাহা সুলতান খোকন, এস এম মুনসুর, যুবদলের আহ্বায়ক রহমত উল্লাহ জিকু, যুগ্ম আহ্বায়ক বাহারুল আলম বাবর, সদস্য সচিব আমান উল্লাহ চৌধুরীসহ স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সহনশীলতা ও সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করাই হবে সবচেয়ে কার্যকর পথ।