নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে রাজধানীতে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৩ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর ১২টায় ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এ মহাসমাবেশ শুরু হবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে এই কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী পরিবেশকে সামনে রেখে এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে সোমবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাদের অংশগ্রহণে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি, জনসমাগম, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। দলীয় সূত্র জানায়, রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগর থেকে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দলটি। এর অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং পরিবহন, আবাসন ও অন্যান্য লজিস্টিক বিষয় নিয়ে কাজ চলছে।
কর্মসূচির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাঁর মতে, এসব বিষয় সমাধান না হলে আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
দলের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম বলেন, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনের সময় সহিংসতা, ভয়ভীতি এবং নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা ভোটারদের অংশগ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে।
এ টি এম মাসুম আরও বলেন, এই বাস্তবতায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরতেই জামায়াতে ইসলামী এই মহাসমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি স্পষ্ট দাবি জানানো হবে, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ এবং বিচারহীনতার অবসান ঘটে।
দলীয় নেতারা জানান, মহাসমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব আইনগত ও প্রশাসনিক নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে। একই সঙ্গে সমাবেশ চলাকালে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়োজিত থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই কর্মসূচি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা, বিচার এবং নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে উত্থাপিত দাবিগুলো আগামী দিনে রাজনৈতিক আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।