নিজস্ব প্রতিবেদক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস)সহ চার প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার বিকৃত করার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় এসব বিকৃত পোস্টার দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল আনুমানিক ২টার দিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনসংলগ্ন লোহার রেলিংয়ে টাঙানো অবস্থায় চারজন প্রার্থীর ছবি বিকৃত করা পোস্টার নজরে আসে। বিকৃত পোস্টারগুলোতে ভিপি প্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম, জিএস প্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ, কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী সালেম হোসেন সিয়াম এবং অপর কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের ছবি ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পোস্টারগুলোতে থাকা ছবির ওপর লাল ও কালো কালি ব্যবহার করে বিকৃতি ঘটানো হয়।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর অল্প সময়ের মধ্যেই বিকৃত পোস্টারগুলোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই নির্বাচনী পরিবেশে এ ধরনের ঘটনার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হলেও পোস্টার বিকৃতির মতো কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত।
শিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থীরা বিষয়টিকে নির্বাচনী শিষ্টাচারবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী সালেম হোসেন সিয়াম জানান, তারা ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, পোস্টার বিকৃতির ঘটনা নির্বাচনী সংস্কৃতির পরিপন্থী এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তারা উদ্বিগ্ন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের মতামত শান্তিপূর্ণভাবে প্রকাশ করবেন।
একই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা বজায় রাখা প্রয়োজন। তাঁর মতে, পোস্টার বা ছবি বিকৃতির মাধ্যমে কোনো পক্ষকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানান এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জকসু নির্বাচন কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এখনো এ বিষয়ে কমিশনের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে কমিশনের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও প্যানেলের তৎপরতা বাড়ছে। পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের প্রচার চালাচ্ছেন। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বারবার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা মনে করছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে সব পক্ষের সংযম ও দায়িত্বশীলতা জরুরি। পোস্টার বিকৃতির মতো ঘটনাগুলো যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তবে তা নির্বাচনী পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মত দেন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারিত জকসু নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হলে নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়, সেদিকেই এখন নজর শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলের।