নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন আরমানিটোলা এলাকায় একটি ১৪ তলা আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ভোরে ভবনটির ছয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মোট নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন আরমানিটোলার হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ছয় তলায় আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া যায়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোকে সতর্ক করা হয় এবং একের পর এক ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট, সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের পাঁচটি ইউনিট এবং সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট অংশ নেয়। সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে আগুন যেন পুনরায় ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ভবনের বিভিন্ন অংশে তল্লাশি ও কুলিং কার্যক্রম চালানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ভবনটি বহুতল হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে দ্রুত ইউনিট মোতায়েন এবং সমন্বিত কার্যক্রমের ফলে আগুন বড় ধরনের ক্ষতির আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। আগুন লাগার সময় ভবনের ভেতরে কতজন মানুষ অবস্থান করছিলেন এবং তারা নিরাপদে বের হতে পেরেছেন কি না—সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি। প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা ভবনের অভ্যন্তরীণ কোনো দাহ্য বস্তু থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুনের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এই ঘটনায় ভবনের কতটুকু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত—সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন পুরোপুরি নির্বাপণের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে বিস্তারিত পরিদর্শন করা হবে। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নতুন নয়। সরু সড়ক, অপর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ভবনের ভেতরে দাহ্য সামগ্রীর মজুত থাকায় এ ধরনের এলাকায় আগুন লাগলে দ্রুত বড় আকার ধারণ করার ঝুঁকি থাকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সময়মতো ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পৌঁছানো এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় এই ঘটনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ভবন মালিক ও ব্যবস্থাপকদের নিয়মিত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা, বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা এবং জরুরি নির্গমন পথ সচল রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সচল রাখা এবং বাসিন্দা ও কর্মীদের অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে।