নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৈশ্বিক বাজারে চালের দাম বাড়লেও আগের দফার তুলনায় তুলনামূলক কম দামে এই চাল আমদানি সম্ভব হওয়ায় এটিকে স্বস্তিদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী। এর অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি চীনের বাড়তি চাহিদার কথা উল্লেখ করেন। চীন বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করছে, যার বড় অংশ ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে সরবরাহের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে তুলনামূলক কম দামে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির সুযোগ পেয়েছে। তার ভাষায়, “গতবারের তুলনায় এবার এই চালের দাম কিছুটা কম, যা আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়।”
সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, শুধু চাল নয়, কৃষি ও খাদ্য খাতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য আমদানির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মরক্কো থেকে ৯০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং এর পাশাপাশি আরও ৪০ হাজার মেট্রিক টন সার আসবে। সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রমজান মাস সামনে রেখে খাদ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাইস ব্র্যান অয়েল আমদানি করা হবে, যা ধানের তুষ থেকে উৎপাদিত হয় এবং ভোজ্যতেলের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে রোজার সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চাল আমদানির ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের মতো বিকল্প দেশ থাকলেও সেখানে থেকে চাল আনতে গেলে প্রতি কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেশি খরচ পড়বে। সে কারণে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের ট্রেড ও পলিসির বিষয়গুলো আলাদা করে দেখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খুব খারাপ হবে না।”
রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বিস্তারিত মন্তব্য না করলেও তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও তার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত তাকে জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, কিছু বক্তব্য বা মন্তব্য সরকার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং সেগুলোর অনেকটাই রেটোরিক বা কথার কথা। তবে সরকার চায় না প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে, সম্পর্কের অবনতি হোক।
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একটি ভবন নির্মাণের জন্য ১০৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে চারটি সড়ক প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ১৯টি সাবস্টেশন বিতরণের বিষয়টিও সভায় আলোচনায় আসে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অবকাঠামোর প্রসঙ্গে তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশের দূতাবাসের জন্য একটি স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে কঠোর সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না হলে অনুমোদন প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন সহায়তা, বাজার স্থিতিশীলতা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন—এই চারটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েই সরকার বর্তমান সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এসব পদক্ষেপের ফলে আগামী দিনে বাজারে স্বস্তি আসবে এবং সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কিছুটা কমবে।