জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় প্রকাশ্য ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেছেন, সরকারের আচরণ ও ইসির ভূমিকা দেখে তিনি ‘নতুন করে অনেক কিছু শিখেছেন’। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে বয়কটের পরিস্থিতি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে।

মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশসহ ২০টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত এই জোট ওইদিন ১১৯টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঞ্জু বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রধান যখন সবাইকে ডাকছেন, তখন তাদের মতো একটি রাজনৈতিক দলকে কেন ডাকা হয়নি—তা তার বোধগম্য নয়। তিনি দাবি করেন, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরাই সাধারণত সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং এই শক্তির প্রয়োগ রাজনীতিতে বৈষম্য তৈরি করে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মতে, এমন পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, যেখানে মানুষ জীবন বাঁচাতে প্রতিরোধমূলক অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, তার দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যেই সমবেত হয়েছে। তবে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হলে এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহার না হলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে।

মিথ্যা মামলার প্রসঙ্গ টেনে মঞ্জু বলেন, ইতিহাসে দেখা গেছে—যারা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হন, তারাই পরবর্তীতে দেশ ও জাতির নেতৃত্বে আসেন। তিনি দাবি করেন, তার রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ সময় নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই কেটেছে।

দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ তারা দেখছেন না; বরং অবনতির ইঙ্গিতই মিলছে। তবুও তার দল নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং গণতন্ত্রে আস্থা রাখে বলে নির্বাচন বর্জনের কথা তারা ভাবতে চান না। তবে পরিস্থিতি এমন হলে, যেখানে কার্যত বয়কট চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন তাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মঞ্জু আরও বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং নিরাপদ ও নির্ভয়ে জীবনযাপন চায়। রাজনৈতিক কর্মীদের প্রধান উদ্বেগ যেন তারা গ্রেপ্তারের শিকার না হন—এই বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যে ভবিষ্যতে বিপদের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এর পরিণতি সরকারকেই ভোগ করতে হতে পারে। তাই দেশ গঠনের স্বার্থে একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করার সরকারি বক্তব্য নিয়েও কটাক্ষ করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে এমন পরিবেশ দেখা গেলেও বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। নিজের নির্বাচনী এলাকা ভাণ্ডারিয়া সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে তিনি নতুন নতুন বিষয় দেখেছেন এবং পরিস্থিতি তাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।

সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন জেপি চেয়ারম্যান। তার মতে, অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে থাকা জনগণের পক্ষে একাধিক ব্যালটে ভোট দেওয়া জটিল হয়ে উঠতে পারে, যা ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

শেষে মঞ্জু বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তারা তাতে অংশ নিতে প্রস্তুত, যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। তবে এ মুহূর্তে ইসি থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো আমন্ত্রণ না পাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন বলেও জানান তিনি।