নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির দলীয় মনোনয়ন না পেলেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের দুটি ইউনিয়ন) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রুমিন ফারহানা জানান, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় সরাইল উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। একই সঙ্গে তিনি ওই দিনই নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। নির্বাচন করবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অবশ্যই নির্বাচন করব।” দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কি না—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “দল দলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আমার সিদ্ধান্ত নেব। আমি নির্বাচন করব।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে জোটগত সমঝোতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, জোটের অংশীদার জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে চারটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব আসনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ রয়েছে। এই আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। গত ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রাথমিকভাবে ২৩৭ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। তবে ওই তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি, যা স্থানীয়ভাবে নানা জল্পনার জন্ম দেয়।
এই আসনের ভোটার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৯ হাজার ৪৪৮ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোটার দুই লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ জন, আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৯ জন এবং বিজয়নগর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৪০ জন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিজয়নগর উপজেলার এই দুটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-2 আসনের অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রে জানা যায়।
গত ২০ ডিসেম্বর বিকেলে সরাইল উপজেলার সৈয়দটুলা গ্রামের খেলার মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুমিন ফারহানা তাঁর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে জানান। তিনি বলেন, দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও তিনি নির্বাচনে থাকবেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি জানি না বাপের মতো বেটিরও কপাল আছে কি না। বাপ স্বতন্ত্র ছিলেন, বেটিও স্বতন্ত্র—সময়ই এর উত্তর দেবে। মনোনয়ন আমি কিনব না। এই মনোনয়ন আমার এলাকার ভোটারদের। তারা যদি মনে করেন, তবেই সেটা আমার হবে।”
ওই বক্তব্যে তিনি তাঁর রাজনৈতিক পারিবারিক ইতিহাসের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর বাবা ১৯৭৩ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সেই নির্বাচনকে ঘিরে তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথাও উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্য স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে।
জোটের স্বার্থে বিএনপি এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং তাদের জোটগত বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হয়। তিনি বলেন, “বিএনপি এত বড় দল। তাদের ভালো-মন্দ দেখতে হয়। যেহেতু জমিয়তে উলামায়ের সঙ্গে তারা জোট করেছে, আসন না দিলে কেমন করে জোট হবে? দল বাধ্য হয়ে তাদের আসন দিয়েছে।”
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার এই ঘোষণায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। নির্বাচনের মাঠে তাঁর অবস্থান এবং ভোটারদের প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে এই আসনের রাজনৈতিক সমীকরণকে কোন দিকে নিয়ে যায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।