রুমী চৌধুরী
দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের সুবাতাস বয়ে গেছে। নেতাকর্মীরা তাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে তারেক জিয়া বলেন, “I have a plan.” যদিও তার এই বক্তব্যে প্ল্যান কী আছে, সে বিষয়ে তিনি সবিস্তারে কিছু বলেননি। তবে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আধিপত্যবাদের চক্রান্ত সম্পর্কেও তিনি জনসাধারণকে সচেতন হতে বলেছেন।
বিএনপি একটি গণতন্ত্রকামী দল। তাই আগামী দিনের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনেকটাই বিএনপির ওপর নির্ভর করছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে—এ কথাও তিনি বলেছেন। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, কারণ এর স্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাই তার দূরদর্শী নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়বে কি না; নাকি উগ্র মৌলবাদীদের থাবায় পড়ে একটি পশ্চাৎপদ জাতিতে পরিণত হবে।
তারেক জিয়া যদি সঠিক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হন অথবা নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হন, তবে এ দেশে উগ্র মৌলবাদী শক্তির উত্থান হবে—যে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যার প্রমাণ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার আক্রমণ। শুধু তাই নয়, যেসব সাংবাদিক ও সংবাদপত্র উগ্র মৌলবাদীদের বিপক্ষে কথা বলবে, তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। তাদের চিন্তাধারা হলো—আমাকে সমর্থন করো, না হয় ভয় পাও।
তারেক জিয়ার আগমনে কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে যে জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে, তা অবিস্মরণীয়। এই পুনর্জাগরণের ধারাকে অব্যাহত রেখে জুলাই আন্দোলনের মূল প্রতিপাদ্য—বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ইতিমধ্যে বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিভিন্ন এলাকা দখল, প্রশাসনে আওয়ামী সরকারের মতো স্বৈরাচারী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ জনগণকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার সংবাদ শোনা যাচ্ছে। তারেক জিয়ার যোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতা যদি এসব অবিচার থেকে জনগণকে রক্ষা করতে না পারে, কঠোর হস্তে দমন করতে না পারে, তবে দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বিদেশি প্রভুরা তাদের ইচ্ছামতো এ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাবে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হবে এবং দেশ যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে যাবে।