আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, কিয়েভে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে রাশিয়া প্রমাণ করেছে যে, তারা ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী নয়। শনিবার এই হামলার পর এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেছেন, “রাশিয়ানরা যুদ্ধ শেষ করতে চায় না এবং তারা ইউক্রেনকে আরও বেশি ভোগান্তিতে ফেলতে এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে চায়।”
শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর কিয়েভ ও এর আশপাশের এলাকায় রাশিয়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে, এক নারী নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো জানান, হামলার পর ২,৬০০টি আবাসিক ভবন, স্কুল, এবং কিন্ডারগার্টেনের তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া, কিয়েভ শহরের বাম তীরের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে, যার ফলে ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
আক্রমণের সময় কিয়েভ অঞ্চলের গভর্নর মিকোলা কালাশনিক জানিয়েছেন, হামলায় ৪৭ বছর বয়সী এক নারী প্রাণ হারিয়েছেন এবং অন্যান্য আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাতভর তীব্র বিস্ফোরণের পর কিয়েভে বিমান হামলার সতর্কতা জারি ছিল।
এদিনের হামলার পেছনে রাশিয়া যে যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী নয়—এমনটাই দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি আরো বলেন, “এই হামলা শুধু আমাদেরই নয়, বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রতি রাশিয়ার আক্রমণের ধারাবাহিকতা।”
বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাতের কারণে কিয়েভ শহরের জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরজুড়ে শীতের মৌসুমে এই হামলাগুলোর কারণে লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন।
এই হামলার ঘটনায় ইউক্রেনের বিমান বাহিনী শনিবার সকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে। তাদের দাবি, রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেশটির বিভিন্ন অংশের দিকে এগিয়ে আসছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শান্তি আলোচনা নিয়ে রবিবার ফ্লোরিডায় বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন জেলেনস্কি। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় ২০ দফার একটি প্রস্তাব রয়েছে, যার মধ্যে যুদ্ধরেখার বর্তমান অবস্থান বজায় রেখে সংঘাত স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে, ইউক্রেন পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ পাবে, এমন একটি প্রস্তাবও রয়েছে।
শুক্রবার, রাশিয়া অভিযোগ করে বলেছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও তার ইউরোপীয় সমর্থকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি পরিকল্পনাটি ব্যর্থ করার চেষ্টা করছেন।
এখন পর্যন্ত চলমান এই যুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত বন্ধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সম্ভাবনা এখনো দৃশ্যমান নয়।