1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
মনে হচ্ছে, আজ বাংলাদেশ এতিম হয়ে গেছে : আসিফ নজরুল কোনো ব্যাগ বা ভারী সামগ্রী সঙ্গে নেওয়া যাবে না খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মইজ্জুর শোক প্রকাশ জানাজা ঘিরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জনতার ঢল বেগম খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রীয় জানাজায় ঢাকাজুড়ে কঠোর ট্রাফিক ডাইভারশন খালেদা জিয়ার মরদেহ ফিরোজায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু নির্বাচনী সময়সূচিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না: ইসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য: রুমিন ফারহানাকে বহিষ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বুধবার সাধারণ ছুটি ,খোলা থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান

খালেদা জিয়ার মরদেহ ফিরোজায়

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৫ বার দেখা হয়েছে

জাতীয় ডেস্ক

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানস্থ তাঁর বাসভবন ‘ফিরোজায়’ নেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়ি ‘ফিরোজা’ ভবনের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে সেখানে উপস্থিত স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর আগে, সকাল ৯টার কিছু আগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাঁর মরদেহ বের করা হয়। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ‘ফিরোজা’ ভবনে খালেদা জিয়াকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁর পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠজন এবং দলীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। পরে তাঁকে জানাজার জন্য নেওয়া হবে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে তাঁর স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরাট শূন্যতা তৈরি করেছে। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়া, স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৮৩ সালে তিনি বিএনপির প্রাথমিক নেতৃত্বে প্রবেশ করেন এবং ১৯৮৪ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে দলের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে আসীন হন।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসে। ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে তাঁর প্রথম শাসনামলে অর্থনৈতিক উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ নীতি এবং শিক্ষাখাতে সম্প্রসারণসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই সময়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা হয়। এ মেয়াদেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি সুসংহত হয়।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর তিনি ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট জয়ী হলে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তাঁর শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে ৫ শতাংশের বেশি ছিল। এ সময় তৈরি পোশাক খাতের সম্প্রসারণ, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, টেলিযোগাযোগ খাতে উদারীকরণ এবং বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। ২০০২ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। একই সময়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)–সহ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ২০০৬ সালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে ঢাকায় আয়োজনের কৃতিত্বও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের।

তাঁর শাসনামলে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা পেলেও, দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বিরোধী দলের সঙ্গে তীব্র বিরোধ, হরতাল-অবরোধের রাজনীতি এবং প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে বিতর্কও দেখা দেয়। ২০০৬ সালের শেষদিকে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়, যার পরিণতিতে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশে সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ওই সময় খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হন এবং পরবর্তীতে একাধিক মামলার মুখোমুখি হন, যা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত বিষয় হয়ে ছিল।

কারাবাস এবং আইনি লড়াইয়ের পর ২০২০ সালে তিনি চিকিৎসাজনিত কারণে সাময়িক মুক্তি পান এবং ‘ফিরোজা’ ভবনেই অধিকাংশ সময় কাটান। এরপর থেকেই তিনি নানাবিধ জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

খালেদা জিয়ার দাফনের স্থান হিসেবে জিয়াউর রহমানের কবরের পাশকে নির্বাচন করা দলীয় আবেগ এবং ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার প্রতিফলন। ১৯৮১ সালে নিহত জিয়াউর রহমানকে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পার্শ্ববর্তী ঐতিহাসিক সমাধি কমপ্লেক্সে দাফন করা হয়। এটি বিএনপির জন্য আবেগঘন রাজনৈতিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান। সেখানেই জানাজার আয়োজন করা হবে বলে দল জানিয়েছে। জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু একটি যুগের অবসান এবং একই সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনাবিন্দু। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং দলটির নীতি–কৌশল ও রাজনৈতিক বয়ান গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল কেন্দ্রীয়। তাঁর মৃত্যু বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কাঠামো, দলীয় ঐক্য এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক, রাজনৈতিক সহাবস্থান এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশের আলোচনাও নতুন করে সামনে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী নারী রাজনৈতিক নেতা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা–পরবর্তী বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল সাফল্য, চ্যালেঞ্জ, সংঘাত, সমালোচনা এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিক মিশেলে নির্মিত। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি যেমন নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি বিরোধী রাজনীতির সময়ও বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলন–কৌশলের কেন্দ্রে ছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার নাম স্বতন্ত্র গুরুত্বে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোক নেমে এলেও, তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, দলীয় আদর্শ, নীতি এবং নেতৃত্বের প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতির গতিপথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com