1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ওসমান হাদির মৃত্যুর দায় সরকারের: রুমিন ফারহানা শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ শেষে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রশিবির নেতার মৃত্যু শহিদ ওসমান হাদির মরদেহ কবি নজরুলের পাশে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় উন্নতি ছায়ানট ভবনে হামলা ও লুটপাট: সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত হবে হামলাকারীরা তারে্ক রহমান ট্রাভেল পাস পেয়েছেন, ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পেছনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ শহিদ ওসমান হাদির বিচারের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে ইনকিলাব মঞ্চ শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের প্রশ্ন: একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি রাশিয়ার নতুন হাইপারসনিক ও পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ বেলারুশে মোতায়েন

দাম বাড়ার চাপে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২
  • ১২৬ বার দেখা হয়েছে

নিত্যপণ্যের বাজার যেন মগের মুলুকে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন অজুহাতেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। দাম বাড়েনি, বাজারে এমন পণ্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সরকারি হিসাবেও মিলছে বাড়তি দামের নজির। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে এখন মানুষের চোখে সরষেফুল দেখার মতো অবস্থা। দিন দিন দ্রব্যমূল্য বাড়লেও বাড়ছে না উপার্জন। আর তাই সাধারণ আয়ের মানুষের জন্য জীবনযাপন প্রচলিত ছন্দে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্তরাসহ সবাই আছে ত্রিশঙ্কু (অনিশ্চিত) অবস্থায়। তাদের বোবাকান্না যেন কোনোভাবেই সংশ্লিষ্টদের কানে পৌঁছায় না।

তেমনি নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না, তাই মূল্যস্ফীতির পারদও চড় চড় করে ওপরে উঠছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুসারে, জুন মাসে দেশের খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে- যা বিগত ৮ বছরে সর্বোচ্চ। এ কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মজুরি সূচক ও মূল্যস্ফীতি প্রায় কাছাকাছি চলে আসছে। আর তাই আয়ের তুলনায় নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান চড়া দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয়ে, ভোক্তারা এখন তাদের ব্যয় কমাচ্ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর অজুহাতে গত এক বছরে দফায় দফায় সংকট সৃষ্টি করেছে নিত্যপণ্যের কারবারিরা। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবারই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বুলি আওড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ডেকে বৈঠক করা হয়েছে। আর প্রতিটি বৈঠকের পরই এসেছে নতুন করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা। সাধারণ মানুষের স্বার্থ ও ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা না করে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এমন সুযোগ হাতছাড়া করছে না মুনাফালোভীরা। কিছুদিন পর পরই কোনো একটি পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির কৌশলে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করে বাড়িয়ে নিচ্ছে দাম। বাজারে সেই দামেও পণ্যটি পায় না সাধারণ মানুষ। মজুত করে আরো দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে মুনাফাখোরদের এমন দৌরাত্ম্য এখন স্থায়ী রূপ লাভ করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারি হিসেবেও প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর হিসাব থেকে গত বছরের ১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১ আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে নিত্যব্যবহার্য গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি পণ্যের দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল, আলু, গুঁড়া দুধ, গরুর গোশত, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, চিনি, শুকনা মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, জিরা ইত্যাদির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত নাজিরশাইল চাল গত বছরের ১ আগস্ট ছিল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। যা গতকাল ১ আগস্ট ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ টাকা থেকে ৭৫ টাকা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দামামায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দার ওপরে। এক বছরে ৪৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে প্যাকেটজাত আটার বর্তমান দাম ৫০ টাকায় উঠেছে। একই অবস্থা ময়দার ক্ষেত্রে। গত বছরের ৪৫ টাকা কেজি ময়দা প্রায় ৫২ শতাংশ বেড়ে বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬২২ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। অস্থির বাজারে সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে ভোজ্যতেলে। বৈশ্বিক অস্থিরতার পাশাপাশি অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে দফায় দফায় বাড়ছে দাম। বোতলজাত এক লিটার তেল ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমান দাম হয়েছে ১৮৮ টাকা। এরপরেও পাওয়া যাচ্ছে না এ মূল্যবান পণ্যটি। এছাড়া ৮০ টাকা কেজি মসুর ডাল এক বছরে ৩৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ১০০-১১০ টাকা, আলু ২৫ টাকা থেকে প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। ২০ শতাংশ বেড়ে জিরার দাম ৪৪০ টাকা, গুঁড়া দুধ ২২ শতাংশ বেড়ে ৭২০ টাকা, ডিম ৩০ টাকা থেকে ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ৪২ টাকা, চিনি প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৮২ টাকা, শুকনা মরিচ প্রায় ৩৭ শতাংশ বেড়ে ৩২০ টাকা, হলুদ ২৬০ টাকা, ধনিয়া ১৬০ টাকা, গরুর গোশত ৬৮০-৭০০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ টাকা হয়েছে।

বাজার ঘুরে ও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শুধু খাদ্যদ্রব্যই নয়, দাম বেড়েছে দৈনন্দিন ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্যেরও। প্রকারভেদে ঘরে ব্যবহার করা অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ শতাংশ। আর প্রকারভেদে এক থেকে দুই মাসের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যে দাম বেড়েছে ২ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। বাড়তি দামের বোঝা সামাল দিতে কাটছাঁট হচ্ছে পুষ্টির তালিকা। আর তাই বাচ্চার জন্য দুধ, ডিম বা ফল কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী তমাল হাসান। নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের চাপ সামলাতে দৈনন্দিন খরচের বাজেট কমিয়ে এনেছেন। আর কোথাও খরচ কমানোর উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে জুলাই মাসে সবজি কেনাও কমিয়েছেন। তমাল, তার স্ত্রী ও সন্তানসহ ৩ সদস্যের পরিবারের জন্য সবজি ও সাবান, টুথপেস্ট ও ডিটারজেন্ট পাউডারের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মাসিক বাজেট ৮ হাজার টাকা। কিন্তু গত মাসে তাদের এসব নিত্যপণ্য কেনার জন্য বাকি ছিল মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা। তমাল বলেন, মহামারি করোনার সময়ও এত বিপাকে পড়িনি। তার অনুমান, গত দুই বছরে নিত্যপণ্যের দাম ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। শুধু জুন-জুলাইতে দাম বেড়েছে ২০%, কিন্তু আয় বাড়েনি একদমই।

একটি জরিপের তথ্যানুযায়ী, নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে সারাদেশে প্রায় ৬৭% পরিবার গত মে মাসে তাদের দৈনন্দিন খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছেন। সারাদেশের ৪ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে, পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) জানিয়েছে, ৩৮% পরিবার জানিয়েছে তাদের শুধু খাদ্যসামগ্রীর কিনতেই আরো অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু নগদ অর্থের অভাবে পরিবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। মে মাসে প্রতি পাঁচটি পরিবারের অন্তত একটি পরিবার দিনে এক বেলা কম খেয়েছে বলে জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, মানুষ মাছ, মাংস, দুধ ও ফল খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে বাজার মনিটরিং জোরদার করা উচিত। তবে বাজার মনিটরিং করেও খুব একটা লাভবান হওয়া যাবে না। চাল-গম-আটা এরকম পণ্যের বাজার তো নিয়ন্ত্রিত নয়। একমাত্র সয়াবিনের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেয়। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে মোটিভেট করা যেতে পারে, যেন তারা ইচ্ছামতো পণ্যের দাম না বাড়ায়। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাজার নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থায় সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা অবৈধভাবে বিভিন্ন পণ্য মজুত করেছে। বাজার ব্যবস্থায় সরকারের যে পদক্ষেপ, তা যদি এই মুহূর্তে আরো জোরদার করা যায় তাহলে কিছুটা হলেও ফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথা অনুযায়ী, যারা সিন্ডিকেট করছে, অবৈধভাবে মজুত করছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন শূন্য সহিষ্ণুতা বজায় রাখা গেলে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হলে বাজার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

জানতে চাইলে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এই মুহূর্তে অপচয় করা যাবে না। তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও বাঁচবে। এখন এমন অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে, যার ওপর দেশের ব্যবসায়ীদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও সবার সাশ্রয়ী হওয়া উচিত। সবাইকে আয় অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে। গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা যেন কোনো পণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়াতে না পারে, সেজন্য সরকারকে বাজার ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। কেউ যেন অনৈতিকভাবে কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com