জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বে একতরফা সিদ্ধান্ত ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরও মন্তব্য করেছেন যে, জাতিসংঘকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং বহুপাক্ষিক শান্তি ও সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য সংস্থাটিকে ক্রমাগত বিকশিত হতে হবে।
বাণীতে, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ দিবসের শুভেচ্ছা জানান এবং জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনে আমরা অঙ্গীকার করছি যে, জাতিসংঘ সনদে কল্পিত শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বিশ্ব গড়ে তুলতে বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের কার্যক্রমের পরিধি গত আট দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে এর সম্পৃক্ততা আরও গভীর হয়েছে। শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নসহ মানবকল্যাণে জাতিসংঘের অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বাংলাদেশের জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভের পর থেকেই এটি একটি সক্রিয়, দায়িত্বশীল এবং অবদানশীল সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শান্তির সংস্কৃতির পতাকা হাতে নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে অংশ নিয়েছে এবং নীল হেলমেটধারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে অবস্থান করছে।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের উদ্দেশ্য যদি আমাদের সবার শান্তি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা হয়, তবে তাকে অবশ্যই পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে অভিযোজিত হতে হবে।’ তিনি জাতিসংঘ সংস্কারের পক্ষে এবং আরও গতিশীল, সমন্বিত এবং পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সবার প্রত্যাশা পূরণের জন্য সংস্থাটির কাঠামোর আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা জোর দেন।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, বর্তমানে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ, নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নতি সাধন করছে। তবে, একতরফা সিদ্ধান্ত এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ড. ইউনূস বাণীতে মন্তব্য করেন যে, সাম্প্রতিক সংঘাতগুলো বিশ্বকে গভীর অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। চরম জাতীয়তাবাদ এবং মানবিক কষ্টের প্রতি উদাসীনতা মানবজাতির দীর্ঘ সংগ্রামে অর্জিত অগ্রগতিকে ধ্বংস করছে। তিনি গাজার বর্তমান পরিস্থিতির উদাহরণ তুলে বলেন, ‘আজ বিশ্বের মানুষ গাজার এক ভয়াবহ গণহত্যার সরাসরি সম্প্রচার প্রত্যক্ষ করছে।’
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নিজস্ব অঞ্চলেও আমরা রোহিঙ্গাদের অধিকারবঞ্চনা ও নির্যাতনের সাক্ষী। এটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির ফল। এ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নতুন মনোযোগ কামনা করেছি।”
অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা অপরিহার্য, তবে সংস্থাটিকে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা অনুযায়ী তার কাঠামো এবং কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একতরফা সিদ্ধান্ত এবং বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এককভাবে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে দেশটি বৈশ্বিক শান্তি এবং উন্নয়নে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান অব্যাহত রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।