বায়ুদূষণের কারণে এশিয়ার বিভিন্ন শহর আবারও শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক বায়ু মান পর্যবেক্ষণ সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (আইকিউএয়ার) তাদের সূচকে প্রকাশ করেছে যে, পাকিস্তানের লাহোর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, যেখানে বায়ু মানের স্কোর পৌঁছেছে ৩৬০। এর ফলে লাহোরের বায়ু বর্তমানে দুর্যোগপূর্ণ বা বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এছাড়া ভারতের দিল্লি ২৪৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যেখানে বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। একইভাবে, কলকাতা ১৮৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে, যেখানে বায়ু অস্বাস্থ্যকর। চীনের বেইজিং ১৭৮ স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে, এবং বাংলাদেশের ঢাকা ১৬৯ স্কোর নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে, যা অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত।
আইকিউএয়ারের বায়ু মান সূচক অনুযায়ী, বায়ুর স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেটি ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোরকে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোর অস্বাস্থ্যকর এবং ২০১ থেকে ৩০০ স্কোর খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। স্কোর ৩০১-এর বেশি হলে সেটি দুর্যোগপূর্ণ বা বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হয়।
বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে দূষণের শিকার শহরগুলোর বাসিন্দারা দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। পাকিস্তান, ভারত, চীন এবং বাংলাদেশে এসব শহরে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকর পদক্ষেপের অভাব গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকায় প্রতিদিনের যানজট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনার অভাব, এবং অন্যান্য শিল্পায়ন জনিত কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। একদিকে, জনগণের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ওপর এর প্রভাব মারাত্মক, অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশের বায়ু মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অতিরিক্ত বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ বছর নিচে নেমে এসেছে। ঢাকাবাসীরা বায়ুদূষণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্যগতভাবে আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণ বর্তমানে বিশ্বের প্রধান স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেখানে পরিবেশগত মান রক্ষায় পর্যাপ্ত কার্যক্রম নেয়া হয় না, সেখানে বায়ু দূষণের প্রভাব ব্যাপক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দূষণের শিকার এসব শহরের সরকারগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়া, বায়ুদূষণ কমাতে পরিবহন ব্যবস্থায় উন্নতি, কলকারখানার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা সম্ভব।
মোটের ওপর, লাহোর, দিল্লি, কলকাতা, বেইজিং এবং ঢাকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বায়ু মানের ভয়াবহ অবস্থা পরিবেশগত সংকট এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ ধরনের দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া, যাতে মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হয়।