জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন শুধু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো, এবং যেসব দলের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ, তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো করণীয় নেই। পাশাপাশি, তিনি বলেছেন, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে সরকার যে কোনো পদক্ষেপ নিলে ইসি তাতে সমর্থন জানাবে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকা পোস্টের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ইসির অবস্থান পরিষ্কার করে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “পলিটিক্যাল পার্টি রেজিস্টার যেই পার্টি হোক, যারা রেজিস্টার, তারা শুধু ইলেকশনে অংশগ্রহণ করতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদের নিয়ে ইসির কিছু করার নেই।
ইসি কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে না, তবে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্যোগকে সমর্থন জানান। “যদি সরকার অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে আমরা সেটিকে সমর্থন জানাব,” বলেন তিনি।
আব্দুর রহমানেল মাছউদ ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার ও গুজব ছড়ানো রোধে ইসির কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, “যদি ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচন-সংক্রান্ত অপব্যবহার বা গুজব ছড়ানো হয়, তাহলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।”
এ বিষয়ে তিনি নতুন একটি আইনগত ব্যবস্থা উল্লেখ করেন, যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ৭৩-এর ‘এ’ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধে শাস্তি হিসেবে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “এটি একটি জেনারেল ল-এর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতাতেও এর বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।”
গুজবের প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটি জাতীয় সমস্যা নয়, বরং গ্লোবাল প্রবলেম। তবে, তিনি গুজব মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া প্রস্তাবগুলিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। “সরকার যত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, নির্বাচন কমিশনের জন্য ততই ভালো হবে,” মন্তব্য করেন তিনি।
আব্দুর রহমানেল মাছউদ একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ধরা যাক, নির্বাচনের কদিন আগে কোনো গুজব ছড়ানো হলো যে, একজন প্রার্থীর নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। যদি এই গুজবটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ছড়ানো হয়, তাহলে তার জন্য শাস্তির বিধান করা হবে।”
এছাড়া, নির্বাচন কমিশন তার অধিকার ও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, নির্বাচনের সময় নির্বাচনী আইন বা পদ্ধতি ভঙ্গকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন, কমিশন শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
নির্বাচন কমিশনারের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর বিষয়ে ইসির অবস্থান এবং গুজব, ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি। এছাড়া, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।