জাতি মূল্যায়ন করবে গত ১৫ মাসে কি কাজ হয়েছে, কতটুকু সফলতা এসেছে এবং কী কী ত্রুটি রয়ে গেছে, মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ড. খালিদ হোসেন বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তিনি বিশ্বাস করেন, দেশের জনগণই সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবেন তার কার্যক্রমের সাফল্য এবং ব্যর্থতা। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে তিনি আর তার সহকর্মীরা মাত্র দুই থেকে তিন মাসের জন্য দায়িত্বে আছেন এবং এ সময়ে তারা জাতির কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এসময় উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কোন ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদ প্রস্থান) আমার প্রয়োজন নেই,” মন্তব্য করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, অনেকেই মনে করেন উপদেষ্টারা নির্বাচনের পর নিরাপদ প্রস্থানের জন্য তৎপর থাকেন, কিন্তু তার কাছে এটি একেবারেই প্রয়োজনীয় নয়।
ড. খালিদ হোসেন, বাংলাদেশ সরকারের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন, তাদের সম্মানিত সহকর্মী ফাওজুল কবির খান সাহেবের একটি মন্তব্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, “যদি সরকার একটি অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করে, তবে আমরা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারব,” বলেছেন তিনি। তার মতে, এটি রাজনৈতিক নেতা ও উপদেষ্টাদের মধ্যে বিরোধ বা মতভেদের বদলে একটি সুন্দর ও কার্যকরী সমাধান হতে পারে।
এছাড়াও তিনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ড. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের সাথে লিয়াজোঁ বা সম্পর্ক রাখা তার উদ্দেশ্য নয়। “যদি আমাকে আগামী সরকারের পক্ষ থেকে সম্মান জানিয়ে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়, আমি তা গ্রহণ করব না,” বলেন তিনি। তার মতে, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে তার কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা লোভ নেই।
অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের ধর্মীয় সহনশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ‘কঠিন চীবরদান’ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, “পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য দেশের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তার মতে, রাষ্ট্রে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সহযোগিতা ও সহনশীলতা বজায় রাখা রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।
নিজের কাজের সততার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ড. খালিদ হোসেন বলেন, “আমি এক টাকার দুর্নীতি করিনি,” এবং হাজিদের ফিরতি অর্থ নিয়ে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। তিনি জানান, সাড়ে আট কোটি টাকা হাজিদের ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং সৌদি আরবে আটকে থাকা ৩৯ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে তা এজেন্সিগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৬ থেকে ১৭ বছরের পুরনো কিছু সমস্যার সমাধান দেড় বছরে করা সম্ভব নয়, তবে তার দল আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। “আমরা চেষ্টা করছি, কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে একটি অনলাইনে ছড়ানো গুজবের ব্যাপারেও তিনি মন্তব্য করেন। ফেসবুকে তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, “যেকোনো সময় আমি মারা যাবো। তবে, এটি কোনো বাস্তবতা নয়।” এর মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অন্তর্নিহিত সত্য প্রকাশ করেন, যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে মানুষের অতিরিক্ত কৌতূহল বা গুজবের প্রতি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন।
এভাবে, ড. খালিদ হোসেন তার দায়িত্বের শেষ দিনগুলোতে সততা, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং নৈতিকতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে দেশবাসীর প্রতি একটি পজিটিভ বার্তা দিয়েছেন।