বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলটির আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেছেন, “এখন রাস্তায় আন্দোলন নয়, এখন জনগণের কাছে যেতে হবে। আমরা হিংসাপরায়ণ রাজনীতির দিকে যেতে পারবো না, সাংঘর্ষিক রাজনীতির দিকে যেতে পারবো না।”
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি ভবিষ্যতে সংঘর্ষমূলক রাজনীতি অবলম্বন করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি আমরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে রাজনীতি করি, তাহলে আমাদের সেই পুরোনো কালচারে ফিরে যেতে হবে।” তাঁর মতে, দলের লক্ষ্য হবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, তবে তা সংঘর্ষ কিংবা সহিংসতার মাধ্যমে নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দলগুলোর একসঙ্গে বসার কালচার কখনো ছিল না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সবাই একত্রিত হয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছেন। “আজকে কিন্তু আমরা এখানে বসে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কথা বলছি। আগামী নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে, সেটি নিয়েও আমরা আলোচনা করছি,”– বলেন তিনি।
আমীর খসরু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ১৬ বছরের সংগ্রাম ছিল বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সাংবিধানিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। আজও সেই সংগ্রাম অব্যাহত।” তিনি বলেন, এখনও দেশের গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসেনি এবং তারা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় জুলাই সনদে সই করেছেন। এর মাধ্যমে তারা আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, “হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে ১৪ মাস আমরা অতিক্রম করেছি, কিন্তু এখনও আমরা নির্বাচিত সংসদ সরকার পায়নি। এজন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন পর্যন্ত কাজ করবো, যেন দেশের গণতান্ত্রিক অর্ডার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।”
আমীর খসরু ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য সহনশীলতা এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদেরকে সহনশীল হতে হবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখতে হবে। দ্বিমত পোষণ করেও তার মতকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে।” তাঁর মতে, এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ হচ্ছে না। প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব দর্শন, চিন্তা ভাবনা ও রূপরেখা আছে, কিন্তু সবকিছু এক জায়গায় হবে না। তাহলে তো আমরা আলাদা দল হতাম না, তাহলে তো আমরা বাকশাল হয়ে যেতাম।”
আমীর খসরু তার বক্তৃতায় আরও বলেন, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে যাবে এবং নির্বাচিত সংসদে পরিবর্তন আনবে। “যে কটা সমাধান হবে না, সেগুলো আমাদের জনসম্মুখে আলাপ আলোচনার মধ্যে রাখতে হবে,”– বলেন তিনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরিবর্তন আনা একদিনে সম্ভব নয়, তবে এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা সময় নিয়ে হতে হবে। সবশেষে তিনি একে অপরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
আমীর খসরুর বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সাংগঠনিক ঐক্য এবং রাজনৈতিক পরিপক্কতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে। তিনি বিএনপির উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে বলেন, দলটি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে চলবে এবং সেই ম্যান্ডেটের ভিত্তিতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, যাতে দেশে একটি সুষ্ঠু এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।